সালথার বাউশখালী জমিদার বাড়ি এখন শুধুই ইতিহাস

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

ফরিদপুরের সালথা উপজেলা পরিষদ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে বল্লভদি ইউনিয়নের বাউশখালী জমিদার বাড়ী। বাউষখালী বাজারের পাশেই অবস্থিত দুই শত বছরের অধিক পুরানো এই জমিদার বাড়ী ৷ যা আজও ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। জমিদার বাড়িতে রয়েছে চুন-সুরকী, ইট, লোহা ও কাঠ দ্বারা তৈরি দৃষ্টি নন্দন একটি মন্দির, তিনতলা বিশিষ্ট পুরাতন ২টি ভবন। এখন শুধু শোনশান নিরবতা ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না।

জানা যায়, বাউশখালী জমিদার বাড়িতে ১৭৬০ সাল থেকে বসবাস সিংহ পরিবারের। তবে শুরু থেকে জমিদারদের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ১৮৫৯ খ্রীষ্টাব্দে এই সিংহ পরিবারে জন্ম নেন যতীন্দ্ৰনাথ সিংহ রায় বাহাদুর। তিনি ত্রিশ বৎসর বঙ্গীয় সিভিল সার্ভিসে প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেট এবং পরবর্তীতে ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। অবসরের পর তিনি সাহিত্য চর্চা করতেন এবং তাঁর রচিত অসংখ্য গ্রন্থ ছিলো বলে জানা যায়। ফরিদপুরের এক অংশ তিনি জমিদারিত্ব করতেন।

যতীন্দ্রনাথ সিংহ ও তাঁর স্ত্রী সরোজিনী সিংহ আমৃত্যু তাঁদের বাউষখালী জমিদার বাড়ি এবং ফরিদপুর শহরে বসবাস করেছেন। মৃত্যুর পরে তাদের সমাধী বাউষখালী বা ফরিদপুরের কোথায় কিভাবে হয়েছে জানা যায়নি!

যতীন্দ্রনাথ সিংহের একমাত্র পুত্র সুরেন্দ্রনাথ সিংহ তৎকালীন সময়ে ডাক্টারী পাস করে কিছুদিন ফরিদপুর টাউনে চিকিৎসা কার্যে নিয়োজিত ছিলেন। তারপর ১৯৩৯ খ্রীষ্টাব্দে তিনি স্ব-পরিবারে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। তার চার পুত্রের মধ্যে সত্যজিৎ সিংহ (বৈদ্যনাথ বাবু) ১৯৫২ খ্রীষ্টাব্দে তাঁর স্ত্রী শ্রীমতি রেখা রাণী সিংহকে নিয়ে কলকাতা থেকে ফের বাংলাদেশে এসে বাউষখালী সিংহবাড়িতে বসবাস শুরু করেন। মানুষের সেবাই ছিলো তার কাজ। হাট-বাজার, স্কুল ও চিকিৎসা সেবার জন্য প্রচুর জমি দান করেছেন সত্যজিৎ সিংহ।

সত্যজিৎ সিংহ ২০১৩ খ্রীষ্টাব্দের ২রা ডিসেম্বর বাউশখালীর নিজ বাড়ীতে দেহত্যাগ করেন। তাঁর স্ত্রী রেখা রাণী সিংহ ২০১৫ খ্রীষ্টাব্দের ২১ অক্টোবর দেহত্যাগ করেন । স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই সিংহবাড়ি সংলগ্ন দূর্গা মন্দীরের পার্শ্বে সমাহিত করা হয়। সিংহ বংশের কেউ কেউ ইন্ডিয়াতে বসবাসরত আছেন কিন্তু বাংলাদেশে সিংহ বংশের কেউ আর অবশিষ্ট নাই। তাই সত্যজিৎ সিংহের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী রেখা রাণী সিংহ বাউষখালী সিংহবাড়ি ও তৎ সংলগ্ন ঠাকুর দালান রক্ষনা-বেক্ষন করার জন্য রাধাগোবিন্দের নামে তাদের সমুদয় সম্পত্তি দিয়ে যান।

স্থানীয়রা জানান, বাপ-দাদার মুখে শুনেছি বাউষখালী জমিদার বাড়িতে সব সময় ছিলো মানুষের বিচরণ। ছিলো না কোন কিছুর অভাব। সোনা, রুপার অলংকার, পাথরের মূর্তি, খাট-পালংকসহ ছিলো অসংখ্য তামা-কাসার ব্যবহারিক জিনিস। এখন কিছুই নেই, নিরবে দাড়িয়ে আছে শুধুই স্মৃতি বিজড়িত চুণ-সুরকি ও কাঠ দ্বারা তৈরি পুরাতন ভবন। এই ইতিহাস ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে ভবনগুলো সংস্কার করার দাবী জানান তারা।

রাধাগোবিন্দ ট্রাস্টের ট্রাস্টি প্রদীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, সত্যেজিৎ সিংহ বেঁচে থাকতেই রাধাগোবিন্দ ট্রাস্টের নামে সহায় সম্পত্তি দিতে চেয়েছিলেন। জমি দেওয়ার আগেই সত্যজিৎ সিংহ দেহ ত্যাগ করেন। এরপর তার স্ত্রী রেখা রানী সিংহ ২০১৪ সালে সমস্ত সম্পত্তি রাধাগোবিন্দ ট্রাস্টের নামে দিয়ে যান। এর আট বছর পর গত দুই বছর ধরে আমি এই বাড়িটি দেখাশোনা করি। এখন বাড়িটি সংস্কার খুব প্রয়োজন।

বল্লভদি ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুর রহমান শাহীন বলেন, জমিদার বাড়ির সত্যেজিৎ সিংহ ও তার স্ত্রী রেখা রানী সিংহ মারা যাওয়ার পর কেউ এখানে আর থাকেন না। এখন শুধু স্মৃতি হিসেবে বাড়িটি রয়েছে। এই বাড়িটি দর্শনার্থীদের জন্য সংস্কার করা দরকার।

Share This Article