সিলেটবাসীর নির্ঘুম রাত, শেষরাতে বাসা-বাড়িতে বন্যার পানি

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

রাতভর টানা বৃষ্টিতে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়ে সিলেট মহানগরের অধিকাংশ এলাকা।কেবল বাসা-বাড়ি নয়, সিলেটের সবচেয়ে বড় চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও নীচতলা পানিতে ডুবেগেছে।

এসব এলাকার বিদ্যুৎ, পানি ও খাবারের সংকট তৈরি হয়েছে। এতে নতুন করে ৬ হাজার পরিবার ভোগান্তিতে পড়েছে। সবমিলিয়ে এখন ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সিলেটের নদ নদীর ৪টি পয়েন্টর পানি বিপদসীমা উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গত রোববার রাত ও সোমবার সকালে ২৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে, সিলেট নগরীর মিরের ময়দান পায়রা, দরগাহ, মিরাবাজার, মেজর টিলা ,তালতলা, মাছুদিঘীরপার, জামতলা, তোপখানা, কাজির বাজার, যতরপুর, তেররতন, উপশহর, সোবহানীঘাট, শেখঘাট, লালদীঘিরপাড় সহ অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে পানি কিছুটা কমতে দেখা গেছে।

বাসিন্দারা জানান, অনেকের বাসার নিচের হাঁটু পর্যন্ত পানি। কোনো ঘরের মধ্যে বিদ্যুত নেই, গ্যাস নেই, খাবার নেই। কেউ সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসছে না।

উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও পানিবন্দি রয়েছেন লাখো মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে গতকাল সোমবার বেলা ১২টায়, সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, কুশিয়ারার অমলসিদ পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে গত ২৪ ঘন্টার ২০০ মি.মি এর বেশি বৃষ্টি হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন সহ ১৪ উপজেলায় বন্যা কবলিত মানুষের সংখ্যা ৬ লাখেরও বেশি। এসব উপজেলার ৫৫৪ টি আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাই হয়েছে ১হাজার ৪শ মানুষের। সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ শাখা জানায়, নতুন করে আরও ৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলররা খাবার পানি, স্যালাইন বিতরণ করছেন।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন জানান সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাত আগামী কয়েকদিন থাকতে পারে। এছাড়া মৌসুমি বায়ুর সিলেটের দিকে চলে এসেছে, যার ফলে সামনের দিনগুলোতে বৃষ্টি আরোও বাড়তে পারে।

নগরীতে বন্যার পানিতে ভুক্তভোগি অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন। সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী লন্ডন সফরে রয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সিটি করপোরেশনের মেয়র ও সিলেটের স্থানীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে দাবি জানান, সিলেটের সুরমা নদী এবং নদীর পাশের ছড়া ও খাল খনন,শহর রক্ষাবাধ ণির্মানের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করেন ।

উল্লেখ্য ২০২২ সালে ভয়াবহ বন্যার সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল মোমেন ও তৎকালিন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সুরমা নদী খনন ও শহর রক্ষাবাধ ণির্মানে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন । কিন্তু তা বাস্তবায়ন না করায় নগরের জনসাধারনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

Share This Article