সৌদি আরবের সঙ্গে সাধারণ শ্রম চুক্তি করবে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মী যায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে। কর্মী যাওয়ার ক্ষেত্রে এতদিন নির্ভর করা হতো নিয়োগকর্তার সঙ্গে কর্মীর কর্মচুক্তির ওপর। কারণ সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সাধারণ কোনও শ্রম চুক্তি ছিল না। শুধু গৃহকর্মী নিয়োগের জন্য একটি চুক্তি করা হয়েছিল দেশটির সঙ্গে। অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, কর্মীর কল্যাণ ও সুরক্ষা নিশ্চিতে সৌদি আরবের সঙ্গে এখন সাধারণ শ্রম চুক্তি করবে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে এই চুক্তির খসড়া প্রস্তুত হয়ে গেছে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সফর শেষে এই চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। তবে চুক্তি সই হবে সৌদি আরবে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের একটাই গৃহকর্মী নিয়োগ চুক্তি ছিল, যেটি ২০১৫ সালে সই হয়েছিল। সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরের সময় চুক্তিটি সই হয়। ওই চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত হয় গৃহকর্মীদের মাসিক বেতন হবে ৮০০ রিয়াল এবং অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করবে সৌদি আরব।

পররাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তির মূল উদ্দেশ্যে হলো কর্মীর সুরক্ষা, নির্ধারিত চাকরিসহ শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা। তাদের সঙ্গে এমন একটি চুক্তি আছে ফিলিপাইনের। সেই চুক্তির আদলে এই চুক্তির খসড়া তৈরি করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সৌদি আরবের সঙ্গে শ্রম ইস্যুতে নেগোসিয়েশন করার জন্য একটি জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটি ছিল। চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ করা হবে। ২০২০ সালে ঢাকায় জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় সাধারণ কর্মীদের শ্রম চুক্তি করার। এরপর থেকে এই চুক্তি করার কাজ চলমান ছিল। চুক্তির আওতায় গৃহকর্মী ছাড়া সব খাতের কর্মী অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী উভয়পক্ষ একটি সহজ অভিবাসন প্রক্রিয়া, কাজে নিয়োগ এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া তৈরি করবে, যেটি আন্তর্জাতিক মান এবং আইন অনুযায়ী নিশ্চিত করা হবে।’

কূটনৈতিক সূত্রে আরও জানা যায়, চুক্তিতে গন্তব্য দেশের আইন প্রতিপালন, নৈতিক নিয়োগ নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া দুই দেশেই অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণের কথা চুক্তিতে উল্লেখ থাকবে। এছাড়া কর্মীর বেতন থেকে যেন কোনও প্রকার অর্থ অবৈধভাবে নিয়োগকর্তা কেটে না রাখেন সেই শর্ত উল্লেখ করা থাকবে। কর্মীর অভিযোগ আমলে নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও চুক্তিতে উল্লেখ থাকবে। আইন ভঙ্গকারী রিক্রুটিং এজেন্সি কিংবা কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে চুক্তি অনুযায়ী।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে কর্মী নিয়োগের একটা সুশৃঙ্খল পথ তৈরি হবে এই চুক্তির মাধ্যমে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চুক্তি করতে সৌদি আরব যাবেন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। কবে যাবেন সেটি এখনও নির্ধারিত হয়নি। তবে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে আগামী মাসে চুক্তিটি সই করার জন্য।

গত আগস্টে এক অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে চুক্তি হচ্ছে। বিগত সরকারের আমলে অনেকবার এই চুক্তির চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু হয়নি। ভারত কিংবা পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের এই চুক্তি নেই, বাংলাদেশের সঙ্গে হতে যাচ্ছে। চুক্তিটি হলে সৌদি আরবে শ্রমিক ভাই বোনদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

Share This Article