গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আওতাধীন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) কর্তৃক সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) এর আইজেক প্রকল্পের মার্কেট ড্রাইভেন কেয়ার গিভিং প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
৮ই জুন (শনিবার) এবং ৯ই জুন (রবিবার) মার্কেট ড্রাইভেন কেয়ার গিভিং লেভেল-২ এর চূড়ান্ত অ্যাসেসমেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ এর অন্যতম সূচক স্মার্ট নাগরিক বিনির্মাণে ও কক্সবাজারের যুব সমাজের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির জন্য সরকারের সহযোগী সংস্থা হিসেবে এ টু আই এর তত্ত্বাবধানে ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও এবং জাতিসংঘ এর উন্নয়নমূলক সংস্থা ইউএনডিপির সার্বিক সহযোগিতায় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) আইজেক প্রকল্পের আওতায় মার্কেট ড্রিভেন-জেনারেল কেয়ার গিভিং প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছে আসছে ।
উক্ত প্রশিক্ষণে কক্সবাজারের সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র যুবক ও নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বিকাশ, কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যে-দক্ষতার উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য সহায়তা কার্যক্রমকে শক্তিশালী করা,প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেয়া । প্রশিক্ষণটি মূলত গ্রামীণ যুবক ও নারীদের জেনারেল কেয়ার গিভিং এর উপর দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবার, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে।
উক্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণের মধ্যদিয়ে প্রশিক্ষণার্থীরা কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত যত্ন নেয়া, মৌলিক চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং মানসিক সহায়তা প্রদান সহ কীভাবে সাধারণ পরিচর্যা সেবা প্রদান করতে হয় সে সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা অর্জন করতে সচেষ্ট হবেন। স্কাস প্রশিক্ষণার্থীদের ব্যবহারিক এবং হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে যোগ্যতা বৃদ্ধির ও চাকরির সুযোগ তৈরি নিশ্চিত কল্পে কাজ করে যাচ্ছেন।
স্কাস জেনারেল কেয়ার গিভিং লেভেল-২ এর উপর দুই গুচ্ছে মোট ৪০ জন প্রশিক্ষণার্থীদের ৭২ দিন প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে । ইতিপূর্বে প্রশিক্ষণ চলাকালীন প্রশিক্ষণার্থীদের দক্ষতা যাচাই ও পরবর্তী ফলোআপ পরিকল্পনার লক্ষ্যে প্রাইমারি ও মিড টাইম মূল্যায়ন করা হয়েছে, শনিবার এবং রবিবার জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-(এনএসডিএ) মাধ্যমে ৪০ জন প্রশিক্ষণার্থীদের ২ দিনের চুড়ান্ত অ্যাসেসমেন্ট পরিচালিত হয়েছে।
সকল প্রশিক্ষণার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করে দিনব্যাপী লিখিত, মৌখিক ও ব্যাবহারিক এসেসমেন্টের মাধ্যমে উক্ত চূড়ান্ত অ্যাসেসমেন্ট সমাপ্ত হয়। উক্ত ৪০ জন প্রশিক্ষণার্থীদের ফলাফল হিসেবে ৯৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী চূড়ান্তভাবে কৃতকার্য হয়েছে ।
অ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(এনএসডিএ) এর বোর্ড প্রতিনিধি এবং সহকারী পরিচারক মো. কামরুল হাসান।
পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, উখিয়ায় প্রথম মার্কেট ড্রাইভেন কেয়ার গিভিং প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছে সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস),সরকার স্কাস ও অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে কক্সবাজার স্থানীয়দের জন্য যে সকল উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে নিজেদের দক্ষতা উন্নয়ন করতে পারলেই নারীরা তাদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে। তিনি বলেন, এই প্রশিক্ষণের মূল্যায়নের মাধ্যমে স্কাস সকল প্রশিক্ষণার্থীদের সরকার অনুমোদিত সার্টিফিকেট প্রদান করবে যা কক্সবাজারের জন্য একটি অনন্য উদাহরণ।
তিনি আরো বলেন প্রশিক্ষণার্থীরা স্থানীয় ও রোহিঙ্গা রেসপন্সেসহ বিভিন্ন সংস্থায় কেয়ার গিভিং পজিশনে কাজ করতে পারবে যা বর্তমানে তাদের জন্য বিরাট একটি সুযোগ। এছাড়া তারা পরিবারের অসুস্থ সদস্যদের প্রাইমারি চিকিৎসা সেবা ও জরুরি মুহূর্তে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করতে পারবে। কেয়ার গিভিং কোর্স শেষে প্রশিক্ষণার্থীরা ট্রেইনার কোর্স এ অংশগ্রহণ করে ট্রেইনার হিসেবে কাজ করতে পারেন বা যে কোনো হাসপাতাল, ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে নার্সিং সেবায় নিয়োজিত হতে পারবেন। এছাড়া এই কেয়ার গিভিং প্রশিক্ষণের সনদপত্র নিয়ে দেশের বাইরেও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারবে প্রশিক্ষণার্থী। সর্বশেষ তিনি এ মহৎ প্রচেষ্টা হাতে নেওয়ায় সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) কে ধন্যবাদ জানান ।
এসময় সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) চেয়ারপার্সন জেসমিন প্রেমা নিরপেক্ষ অ্যাসেসমেন্ট সফলভাবে পরিচালনা করায় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং এসেসমেন্টে কৃতকার্য মেয়েদের নার্সিং ও কেয়ার গিভিং এর উপর জার্মানে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।
আলোচনায় তিনি বলেন স্কাস কক্সবাজারে সুবিধা বঞ্চিত মা-বাবাদের জন্য বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ করবেন এবং বৃদ্ধাশ্রমে প্রশিক্ষণার্থীদের চাকরির সুযোগ দিবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি আরো বলেন, এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কেয়ার গিভার তৈরি হবে যার মাধ্যমে ভুল ও বিলম্ব চিকিৎসায় আর কেউ প্রাণ হারাবে না।
তিনি সকল উন্নয়ন সংস্থার প্রতি অনুরোধ রেখে বলেন, আমাদের সকলের উচিত এইধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের মানুষদের দক্ষতা অর্জনের সারথি হওয়া এবং টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা।
প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সমাজে নিজের অবস্থান তৈরি করতে নিজেদের সচেতন হতে হবে, বিশেষ করে নারীদের আরও বেশি সচেতন হওয়ার প্রতি তিনি জোর দেন।
অ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রমে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উখিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সাঈদ মোহাম্মদ আনোয়ার, উখিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সরওয়ার আলম শাহীন,উখিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ।
স্কাসের এই ভিন্নধর্মী উদ্যোগের প্রশংসা করে উপস্থিত অংশীজনরা বলেন, প্রশিক্ষণের সফলতা নির্ভর করে আয়োজকের দৃঢ়তা ও গুণগত মানের উপর, নিঃসন্দেহে স্কাস কক্সবাজার স্থানীয়দের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছে, স্কাসের কেয়ার গিভিং অ্যাসেসমেন্ট পরিদর্শনকালে প্রশিক্ষণার্থীদের দক্ষতা দেখে তার বলেন, স্কাস উদ্যোগ নিলে কেয়ার গিভিং প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়ে প্রান্তিক পাড়ায় মহল্লায় স্বাস্থ্য সেবা সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অসহায় সুবিধা বঞ্চিত মানুষের আলোর দিশারী হতে পারেন।