
নিখোঁজের একদিন পর হাত-পা, মুখ ও চোখ বাঁধা অবস্থায় কলেজ পড়ুয়া এক কিশোরীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ ও স্থানীয়রা। উদ্ধারের পর ভূক্তভোগী জানিয়েছে প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করায় প্রেমিক সিয়াম ও তার সঙ্গীরা তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ব্রিজের নিচে ফেলে গেছে। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পুলিশ ও স্থানীয়রা ভূক্তভোগীকে উদ্ধার করলেও পুলিশ জানিয়েছে লিখিত অভিযোগ পেলে নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।
শনিবার (১ জুন) শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভূক্তভোগী ওই কিশোরীকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।
অভিযুক্ত সিয়াম পেদা (১৯) ডামুড্যা উপজেলার সিঁদুলকুড়া ইউনিয়নের ছোট সিঁদুলকুড়া গ্রামের খোদা বক্স পেদার ছেলে। সে গোসাইরহাটের সরকারি শামসুর রহমান কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
ভূক্তভোগীর পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গোসাইরহাটের সরকারি শামসুর রহমান কলেজের শিক্ষার্থী সিয়াম পেদার সঙ্গে দীর্ঘ আড়াই বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল ভূক্তভোগী ওই কিশোরীর। প্রায় বিশ দিন আগে ব্যক্তিগত একটি বিষয়ের কথা কাটাকাটির জেরে তাদের সম্পর্কের ইতি ঘটে। এরপর গত বৃহস্পতিবার ( ৩০ মে) ওই কিশোরী কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে ডামুড্যার ফরাজি টেক নামক স্থান থেকে সিয়াম পেদা ও তার চার জন সঙ্গী তাকে জোর পূর্বক হাত-মুখ বেঁধে অজ্ঞান করে পরিত্যক্ত একটি ঘরে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এদিকে ওই কিশোরী বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করতে থাকে। পরিবারের লোকজন তাকে কোথাও না পেয়ে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি ডামুড্যা থানা পুলিশকে জানায়। শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে ডামুড্যা থানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে ভূক্তভোগীর বাবা জানতে পারে ডামুড্যার সিঁদুলকুড়া কাঠের ব্রিজের ওপর হাত-পা, চোখ মুখ বাঁধা অবস্থায় এক কিশোরীকে পাওয়া গেছে। এরপর ভূক্তভোগীর বাবা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই কিশোরীকে শনাক্ত করে। পরে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ভূক্তভোগীকে উদ্ধার করে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পেলেক্সে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। পালাক্রমে ধর্ষণের কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য কিশোরীকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পেলেক্সের চিকিৎসকরা। এরপর ভূক্তভোগীকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে ভূক্তভোগী ওই কিশোরী বলেন, প্রেমের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করায় কলেজ থেকে ফেরার পথে সিয়াম ও তার সঙ্গে থাকা চারজন ব্যক্তি হাত-মুখ বেধে অজ্ঞান করে আমাকে একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যায়। এরপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে তারা আমার হাত-পাতা, মুখ চোখ বেধে ব্রিজের ওপর ফেলে রেখে যায়। বিষয়টি নিয়ে জানার জন্য সিয়াম পেদার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ভূক্তভোগীর বাবা বলেন, আমার মেয়ে নিঁখোজের সংবাদ থানায় জানিয়ে আমরা বাড়িতে ফিরতেছিলাম। এমন সময় খবর পাই একজন মেয়েকে সিঁদুলকুড়া ব্রিজের ওপর হাত-পা বাধা অবস্থায় পাওয়া গেছে। এরপর ওই ব্রিজে গিয়ে আমি আমার চিনতে পারি। পরে পুলিশ গিয়ে আমার মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে চিকিৎসার জন্য। এঘটনায় আমি আইনের আশ্রয় গ্রহণ করব।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মিতু আক্তার বলেন, ধর্ষণের শিকার এক কিশোরীকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল। ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আলামত সংগ্রহ করে ওই কিশোরীকে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ডামুড্যা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমারত হোসেন বলেন, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় এক কিশোরীকে সিঁদুলকুড়া ব্রিজের ওপর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিশোরীকে ব্রিজের ওপর থেকে উদ্ধার করার আগে তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল থানায়। তবে অভিযোগটি নথিভূক্ত করার আগেই আমরা জানতে পেরেছি কিশোরীকে ব্রিজের ওপর পাওয়া গেছে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। এঘটনায় ভূক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।