১২০০ টন রপ্তানির অনুমতি, ভারতে গেলো মাত্র ১০৭ টন ইলিশ

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শর্ত অনুযায়ী রোববার (৫ অক্টোবর) ছিল ভারতে ইলিশ রপ্তানির শেষদিন। এবার অনুমতির ১২০০ টনের মধ্যে মাত্র ১০৭ টন ২২৬ কেজি ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। দেশের ৩৭ জনের মধ্যে মাত্র ১৬ জন রপ্তানিকারক ইলিশ রপ্তানি করতে পেরেছেন। এরমধ্যে বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছে ১০৬ টন ৩৪ কেজি। আর আখাউড়া বন্দর দিয়ে ভারতে গেছে এক টন ১৯২ কেজি। ইলিশ উৎপাদনে ঘাটতি ও দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, ইলিশ আগে সাধারণ মাছের মতো রপ্তানি পণ্যের তালিকায় থাকলেও উৎপাদন ঘাটতি দেখিয়ে ২০১২ সাল থেকে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে বিগত সরকার। পরে ২০১৯ সালে এসে বিশেষ বিবেচনায় আবারও শুধু দুর্গাপূজার সময় শর্তসাপেক্ষে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার আগে ইলিশ যাচ্ছে ভারতে।

চলতি বছর গত ১৬ সেপ্টেম্বর দেশের ৩৭ জন রপ্তানিকারককে ১২০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় রপ্তানি। শর্ত অনুযায়ী ৫ অক্টোবর ছিল রপ্তানির শেষদিন। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ৩৭ জনের মধ্যে ১৬ জন ব্যবসায়ী মাত্র ১০৭ টন ২২৬ কেজি ইলিশ রপ্তানি করতে পেরেছেন।

এরআগে, গতবছর ৪৯ জন রপ্তানিকারককে দুই হাজার ৪২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। সেসময়ও ৪৯ জনের মধ্যে মাত্র ২৬টি প্রতিষ্ঠান ৫৩২ টন ইলিশ রপ্তানি করেছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সক্ষমতা যাচাই না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় রপ্তানিকারক নির্বাচন করায় রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।

মৎস্য দপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে ৭৯ প্রতিষ্ঠানকে তিন হাজার ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলেও রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৬৩১ দশমিক ২৪ টন। ২০২২ সালে ৫৯ প্রতিষ্ঠানকে দুই হাজার ৯০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে রপ্তানি হয় মাত্র এক হাজার ৩০০ টন। ২০২১ সালে ১১৫ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া চার হাজার ৬০০ টন অনুমোদনের বিপরীতে রপ্তানি হয়েছিল এক হাজার ৬৯৯ টন। ২০২০ সালে দুর্গাপূজা উপলক্ষে এক হাজার ৪৫০ টন অনুমতি দিলেও ভারতে গিয়েছিল মাত্র ৫০০ টন। ২০১৯ সালে ৫০০ টন রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে রপ্তানি হয়েছিল ৪৭৬ মেট্রিক টন ইলিশ।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দরবিষয়ক সম্পাদক মেহেরুল্লাহ বলেন, ‘সক্ষমতা যাচাই না করে রপ্তানিকারক নির্বাচন করায় সরকার বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে। রপ্তানির আগে অনুমতি নিতে সবাই ঝাপিয়ে পড়ে। পরে একটি মাছও রপ্তানি করতে পারেন না। তারাই আবার পরের বছর রপ্তানির অনুমতি পান।’

আজিজুর রহমান নামের একজন মাছের ক্রেতা বলেন, ‘ভারতে ইলিশ রপ্তানির সময় দেশে দাম দ্বিগুণ বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকে। রপ্তানি আদেশ না দিলে দেশের বাজারে দাম কমতে পারে।’

৩০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছিলেন বেনাপোলের ইলিশ রপ্তানিকারক বিশ্বাস ট্রেডার্সের মালিক নুরুল আমিন বিশ্বাস। তবে কোনো ইলিশ রপ্তানি করতে পারেননি।

তিনি বলেন, ‘রপ্তানি দরের চেয়ে বাজারে ইলিশের দাম অনেক বেশি। অন্যদিকে ভারতের বাজারে নিজস্ব ইলিশ থাকায় সেখানকার বাজারে দাম কম। ভারতের আমদানিকারকরাও ইলিশ নিতে তেমন আগ্রহ দেখাননি। যে কারণে অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই রপ্তানি বন্ধ রেখেছেন। এছাড়া কম সময় বেঁধে দেওয়ার কারণে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি।’

বেনাপোল বন্দরের মৎস্য নিয়ন্ত্রণ ও মান নির্ণয় কেন্দ্রের পরিদর্শক আসাওয়াদুল ইসলাম জানান, শর্ত অনুযায়ী ৫ অক্টোবর ইলিশ রপ্তানির শেষদিন। এবার বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১০৬ টন ৩৪ কেজি ইলিশ ভারতে গেছে। এসব ইলিশের প্রতিটির ওজন এককেজি বা তার বেশি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিকেজির সর্বনিম্ন রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করে দেয় ১২ ডলার ৫০ সেন্ট। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক হাজার ৫৩৫ টাকা।

Share This Article