২০০ বছরের কষ্টের অবসান,জামায়াতের মানবিক উদ্যোগে স্বস্তি

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে অবশেষে শেষ হলো দুই শত বছরের কষ্ট। দীর্ঘদিন ধরে নদী পারাপারে নৌকার ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবনে এসেছে স্বস্তি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে নির্মিত কাঠের সাঁকো এখন গ্রামবাসীর যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

কাঠের এই সাঁকোটি নির্মাণের ফলে ডামুড্যা উপজেলা বন্দর বাজারের সাথে কয়েকটি ইউনিয়নের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। এতে শিক্ষার্থী, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের চলাচল সহজ হয়েছে। এখন তারা সহজে স্কুল, বাজার ও কর্মস্থলে যেতে পারছেন।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে ডামুড্যা উপজেলার মধ্য বাজার খেয়াঘাট এলাকায় সাঁকোটির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী আজহারুল ইসলাম। উদ্বোধন শেষে তিনি স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং বলেন, জনগণের কষ্ট লাঘব করাই জামায়াতে ইসলামীর মূল লক্ষ্য। এই সাঁকো কোনো রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ নয় বরং মানুষের কল্যাণে আমাদের সামাজিক দায়িত্বের বহিঃপ্রকাশ।

ডামুড্যা পৌরসভা আমীর আতিকুর রহমান কবিরের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডামুড্যা উপজেলা আমীর মাওলানা সাইফুল ইসলাম, সেক্রেটারি মো: কবির হোসেন, উপজেলা সূরা সদস্য ও শরীয়তপুর-৩ নির্বাচনী আসনের প্রধান সমন্বয়কারী কাজী ইলিয়াছ, জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য
বি.এম মোজাম্মেল হক, পৌর কর্মপরিষদ সদস্য ও নিউনেস ইসলামি একাডেমি ও মডেল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা মো: সাইফুল ইসলাম, বন্দর ব্যবসায়ী মো. মোদাচ্ছের হোসেন, মো. মকবুল হোসেন মাদবর সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও তরুণ সমাজ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মার শাখা জয়ন্তী নদী। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই নদী পারাপারে ছিল ছোট্ট একটি নৌকা। যা মাঝে মধ্যে নদীতে স্রোত থাকলে বন্ধ রাখতেন নৌকার মাঝি। যুগের পর যোগ পার হলেও এই নদী পারাপারের জন্য ছিল না কোনো স্থায়ী সেতু। বর্ষা মৌসুমে নদী ফুলে-ফেঁপে উঠলে পারাপার হতো কষ্টসাধ্য। নৌকা না পেলে বন্ধ থাকত স্কুলে যাওয়া, বাজার করা বা জরুরি কাজে চলাচল। বিশেষ করে শিক্ষার্থী, কৃষক ও নারী-শিশুদের ভোগান্তি ছিল চরম।স্কুল,কলেজ সহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো বাজারে হওয়ায় কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় এক লাখ মানুষ প্রতিদিন ছোট্ট নৌকা দিয়ে কিংবা দুই কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতো। স্থানীয় মানুষ বিশেষ করে স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থী, কৃষক, শ্রমজীবী, নারী ও শিশু সবাইকে প্রতিদিনই পারাপারের সময় পড়তে হতো চরম দুর্ভোগে। বৃষ্টি ও বর্ষার সময় নৌকা না পেলে শিক্ষার্থীদের অনেককে স্কুলে যেতে পারতো না। ঘটেছে একাধিক নৌ-দুর্ঘটনায়। আর কৃষকদের ক্ষেত-খামারে পৌঁছাতে হতো বড়ো ঘুরপথে। চরাঞ্চল থেকে উৎপাদিত পণ্যে বাজারে আনানেওয়া ক্ষেত্রে পড়তে হতো বীড়াম্বনায়। এমনকি অসুস্থ মানুষদের চিকিৎসার জন্য নৌকা পাওয়া না গেলে অনেক সময় বিপদের মুখেও পড়তে হতো। একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখানে ব্রিজ নির্মাণ করা হয় নি। তাই মানুষের কষ্ট লাগবে এখানে একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

স্থানীয় আব্দুল কুদ্দুস ছৈয়াল বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে নৌকা দিয়ে পার হইতাম। এখন হেঁটেই পার হবো এইটা আমাদের জীবনের বড় সুখ। কখনো চিন্তা করি নি এখানে সাঁকো বা ব্রিজ হবে।

স্কুল শিক্ষার্থী আয়েশা আক্তার বলেন, আগে প্রতিদিন স্কুলে যেতে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হতো। বর্ষায় অনেক সময় নৌকা না পেলে ক্লাস মিস করতাম। এখন সাঁকো দিয়ে সহজেই যাওয়া যাবে এতে সময়ও বাঁচছে আর ভয়ও নেই।

নৌকার মাঝি কামরুল বেপারী বলেন, আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে এই নদীতে নৌকা চালিয়ে মানুষ পার করাতাম। এর আগে আরও অনেক মাঝী পারাপার করতো। সাঁকো হওয়াতে গ্রামের মানুষের কষ্ট কমবে এইটা ভেবে ভালোই লাগে। আগে বর্ষায় নৌকা ডুববে ভয় পেতাম। এখন সবাই নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে। জামায়াতের লোকজন নিজেরা খরচ করে সাঁকো বানিয়েছে এতে গ্রামের সবাই উপকৃত হয়েছে। মানুষের উপকার হলে তাতে আমার কোনো কষ্ট নেই।

ডামুড্যা পৌরসভা আমীর আতিকুর রহমান কবির বলেন, আমরা জনগণের পাশে থাকতে চাই সেটা ক্ষমতায় থাকি বা না থাকি। এলাকার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের যাতায়াতে দীর্ঘদিনের কষ্ট দেখেই আমরা সাঁকোটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। মানুষের কল্যাণে কাজ করাই আমাদের দায়িত্ব ও দায়িত্ববোধ।এই সাঁকো হয়তো স্থায়ী সমাধান নয়, কিন্তু এটি মানুষের ভোগান্তি অনেকটা লাঘব করবে। ভবিষ্যতে স্থায়ী সেতু নির্মাণের জন্যও আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাব।

প্রধান অতিথি আজহারুল ইসলাম বলেন, জনগণের দোয়া ও সহযোগিতায় আমরা সবসময় মানবসেবায় নিয়োজিত থাকতে চাই। ডামুড্যার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াত সমস্যায় ভুগছেন। এই সাঁকো নির্মাণ আমাদের একটি ছোট প্রচেষ্টা মাত্র। আমরা বিশ্বাস করি মানুষের কল্যাণে কাজ করাই প্রকৃত রাজনীতি। জামায়াতে ইসলামী শুধু রাজনৈতিক সংগঠন নয় এটি একটি মানবকল্যাণমূলক আন্দোলন। জনগণের পাশে থেকে উন্নয়ন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

Share This Article