৫ লাখ মানুষ সিলেটে পানিবন্দি

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী ৫টি উপজেলায় আকষ্মিক বন্যা দেখা দিলেও শুক্রবার অনেক এলাকায় ঢলের পানি নেমে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলায় গত বুধবার রাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। ৫ উপজেলায় অন্তত ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তবে শুক্রবার অনেক বাড়িঘর থেকে পানি নেমে গেছে। অবশ্য নতুন করে জেলার গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও বিশ্বনাথের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। একইসঙ্গে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট নগরীর কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

বৃষ্টির পানি দ্রুত গিয়ে নদীতে না নামায় নগরীর তালতলা, শেখঘাট, তেররতন, কালিঘাট এলাকার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডসূত্র (পাউবো) জানায়, শুক্রবার সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি ৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, পানিবন্দি লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার কার্যক্রম চলছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক চিকিৎসক দল গঠন করা হয়েছে।

সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, জেলার ১৩টি উপজেলায় বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৫৪৭টি। বন্যাকবলিত ৮ উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ৩ হাজার ৭৩৯ জন। সিলেটের আট উপজেলায় বর্তমানে পানিবন্দি হয়েছেন ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭০ জন মানুষ।

বন্যায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন গোয়াইনঘাট উপজেলায় ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০ জন। এই উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নই বন্যাকবলিত হয়েছে আর ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ১ হাজার ২৪২ জন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়েছেন ৯৩ হাজার মানুষ। উপজেলায় ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ৭৩ জন মানুষ। কানাইঘাট উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি প্লাবিত হয়েছে, পানিবন্দি হয়েছেন ৮০ হাজার ৬০০ মানুষ আর ৩১টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ১৪৭৬ জন।

জৈন্তাপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে ৬৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। এই উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৪৮টি। যার মধ্যে ৬৭৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জকিগঞ্জ উপজেলায় ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়েছেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ জন। এই উপজেলার ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন ১৯৮ জন মানুষ।

এদিকে নতুন করে বন্যাকবলিত বিয়ানীবাজার উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়েছেন ৫ হাজার ৫০০ মানুষ। বিয়ানীবাজারে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৭টি আর আশ্রয় নিয়েছেন ৬০ জন। গোলাপগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ১টি ইউনিয়নে বন্যাকবলিত হয়েছেন ৩ হাজার ৫০০ মানুষ। এই উপজেলায় ৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ১৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন। সিলেট সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬২০ জন। এই উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ২৯টি। তবে এখনও কেউ এসব কেন্দ্রে আশ্রয় নেননি। ইতিমধ্যে ব্যাপকভাবে বন্যাকবলিত গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও জকিগঞ্জ উপজেলার বন্যাকবলিতদের জন্য ১০০০ বস্তা শুকনো খাবার, ৭৫ টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে আরো জানা গেছে, পানিবন্দি পরিবারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরের কার্যক্রম চলছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে ইউনিয়নভিত্তিক মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হচ্ছে।

Share This Article