ধরাছোঁয়ার বাইরে জ্বালানি তেলের মাফিয়া আ.লীগ নেতা ফরহাদ

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

স্টাফ রিপোর্টার।।

খুলনায় জ্বালানি তেল সেক্টরে অঘোষিত মাফিয়া আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে তেল লুট ও পরিবহন দখলবাজির মতো কার্যক্রম এখনো অব্যাহত রেখেছেন এ নেতা। থানায় অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। তার এই লুটপাটের কাজে সরকারি ডিপোর কর্তাব্যক্তিরাও জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

ব্যক্তিগত অস্ত্র ঠেকিয়ে একাধিক তেল ব্যবসায়ীকে হুমকি ও তেল লুটপাটের ঘটনায় চলতি বছরের শুরুতে ফরহাদের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে জেলা প্রশাসন। এরপরও সরকারি ডিপোর কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় খুলনার জ্বালানি তেল সেক্টরে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছেন ওয়ার্ড আ.লীগের ১নং সদস্য ফরহাদ হোসেন। আগে নগর শ্রমিক লীগের নেতা ছিলেন এই ফরহাদ। এ নিয়ে খুলনার জ্বালানি তেল সেক্টরে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। অবিলম্বে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত যমুনা ডিপো থেকে জ্বালানি তেল নিতে আসেন সাতক্ষীরার তেল ব্যবসায়ী মো. জাকির হোসেন লস্কর। এ সময় জাকির হোসেনের মালিকানাধীন পরিবহন লস্কর ফিলিং লরিটি আটকে দেন আ.লীগ নেতা ফরহাদ হোসেন। এ সময় গাড়ির ড্রাইভার জাকির হোসেন অনুনয়-বিনয় করলে তাকেও আটকে রাখার হুমকি দেন তিনি।

বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে যমুনা ডিপোর সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, দুপুর দেড়টায় লস্কর ফিলিং লরিটি তেল বোঝাই করে সাতক্ষীরার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছিল। এ সময় একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে ফরহাদ ৪-৫ জন লোক নিয়ে আসে যমুনা ডিপোর অভ্যন্তরে। গাড়ি থেকে নেমে ডিপোর উপ-ব্যবস্থাপকের কক্ষের বারান্দায় ড্রাইভারকে ডেকে নিয়ে যান ফরহাদ।

এ সময় ড্রাইভারকে উদ্দেশ করে কিছু বলতে দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পর লস্কর ফিলিংয়ের গাড়িটিকে নিয়ে যমুনা ডিপোর পাশে পার্ক করে রাখা হয়। এর প্রায় আধ ঘণ্টা পর তেলবোঝাই গাড়িটি নিয়ে ডিপোর বাইরে রাস্তার পাশে আটকে রাখা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গাড়িটি সেখানেই ছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড্রাইভার জালাল উদ্দিন বলেন, আমি গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলাম। এ সময় ফরহাদ ও তার দলবল আমাকে গাড়ি রেখে চলে যেতে বলে। তখন তাদের প্রত্যেকের হাতে অস্ত্র ছিল। আমি ভয় পেয়ে অনেক অনুনয়-বিনয় করলে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন ফরহাদ। পরে আমি বিষয়টি আমার মালিককে জানাই।

লস্কর ফিলিং স্টেশনের মালিক জাকির হোসেন বলেন, ফরহাদ দীর্ঘদিন ধরেই আমার গাড়িটি নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ব্যবসায়িক কারণে আমার ভাই জোনায়েদ হোসেনের সঙ্গে ফরহাদের শত্রুতা রয়েছে। সেই সুবাদে সে প্রায়ই আমার গাড়ি দখলে নিয়ে ব্যবসায়িক ক্ষতিসাধন করে। আগে বিভিন্ন সময় টাকা-পয়সা দিয়ে মিটমাট করেছি। কিন্তু দেশের এই স্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যেও আমার গাড়ি দখল করার চেষ্টা দেখে আমি অবাক হয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমি খালিশপুর থানায় অভিযোগ করতে গেলেও থানা মামলা নেয়নি। বাধ্য হয়ে আমাদের আদালতের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে। বিষয়টি আমি জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির সভাপতি ও সম্পাদককে জানিয়েছি।

এ বিষয়ে যমুনা ডিপোর উপমহাব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার মো. তানভীর হাসান ডালাস কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি তার কক্ষ থেকে বের হয়ে যান।

এসব বিষয় অস্বীকার করে ফরহাদ হোসেন বলেন, আমি টাকা পাব লস্কর ফিলিং স্টেশনের মালিক জাকির হোসেনের ভাই জোনায়েদের কাছে। সেজন্য তার ড্রাইভারকে আমি বলেছিলাম, যেন সে তার মালিককে বলে। আর কারও কোনো ক্ষতি করে থাকলে আমার বিরুদ্ধে কেউ তো অভিযোগ দেয়নি।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো আমার প্রতিপক্ষ মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে করিয়েছে। তিনি বলেন, আমি অস্ত্রের মহড়া দিলে তো সিসিটিভিতে ফুটেজ থাকবে। সেখানে দেখুন আছে কি না।

Share This Article