স্টাফ রিপোর্টার
নির্মল, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নগরবাসী কাম্য। নগরবাসীকে নির্মল পরিবেশ উপহার দেওয়ার জন্য বহুবিধ কেসিসির কঞ্জারভেজ্ঞী বা বর্জ্য ব্যবস্থাপণা শাখা বিরতিহীন কাজ করে রয়েছে। শহরের বিভিন্ন নোংরা-ময়লা বর্জ্য আর্বজনা ফেলার জন্য নির্ধারিত স্থানে ডামিং পয়েন্ট, বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ডাস্টবিন। অসচেতন নগরবাসী তাদের ইচ্ছা-স্বাধীনভাবে যেখানে সেখানে ময়লা আর্বজনা ফেলে পরিবেশ নোংরা করে তুলছে, ওই সকল আর্বজনা মধ্যে পলিথিনের উপস্থিত রয়েছে যথেষ্ট পরিমানে। নগরীর বাসিন্দারা বলছে, বাড়ি থেকে তারা বের হলেই প্রতিনিয়তই তাদের চোখে মিলছে গলিগলিতে, ফাঁকা জায়গা, রাস্তার উপর বা আশেপাশে পড়ে থাকা ময়লা আবর্জনার স্তুপ। যে স্তুপের প্রায় ৭০ শতাংশ আর্বজনাই হলো পলিথিন, আর বাকি অংশ কাগজ, বাচ্চাদের ব্যবহৃত প্যাম্পপাস গৃহস্থালির উৎচ্ছিস্ট ময়লা বা প্লাস্টিকের বোতল সহ অন্যান্য বর্জ্য। বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা এই বর্জ্যগুলো কুকুর টেনে এনে রাস্তার উপর নোংরা করছে পরিবেশ। নগরীর জুড়ে পলিথিনের অতিমাত্রায় ব্যবহার ধীরে ধীরে গোটা নগরীর নোংরা রাজ্য পরিনত হয়েছে, সেই সাথে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, পরিবেশ চরম হুমকিতে পড়েছে একটি ভয়াবহ ক্ষতির বাহক পলিথিনের কারণে। কোন ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না পলিথিনের ব্যবহার। সঠিক তদারকীর অভাবে বাজার গুলোতে চলছে অবাধে পলিথিনের ব্যবহার আর কেনাবেচা। কেন বন্ধ হচ্ছে না পলিথিনের, কেন কমছে না এর ব্যবহার? পলিথিনের বিকল্প উপায়ই বা কী? এগুলো সকল প্রশ্ন নিয়ে সচেতন মহলের আলোচনা থেকে নেই। সমাজের সচেতন ব্যক্তিবর্গ বলছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রমের সক্রীয়তা যদি বৃদ্ধি করা যায়, তবে বাজারসহ সর্বত্র প্রতিদিনই পলিথিনের হ্রাস পাবে। বাংলাাদেশ কৃষি গবেষনার তথ্য মতে, পলিথিন হলো একটি নন-বায়োডিগগ্রেটেবল বন্তু যা অপচনশীল। যা পরিবেশের জন্য চরম হুমকির কারণ। পলিথিন অপচনশীল হওয়ার বছরের পর বছর মাটির নীচে থাকার পরও নষ্ট হয় না। যে কারণে মাটির নীচের জীব-বিচিত্র প্রানাশের হুমকির মুখেসহ মাটি তার উর্বরতা হারাচ্ছে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার, উৎপাদন আইনে নিষিদ্ধ।
সরেজমিনে, ডাকবাংলা, শিববাড়ী, নিউমার্কেট, ময়লাপোতা, সোনাডাঙ্গা, গল্লামারী, নিরালা, রুপসা, বয়রা, বৈকালী, দৌলতপুর,আড়ংঘাটা, খালিশপুর, মানিকতলা, ফুলবাড়ী, শিরোমনি সহ গুরুত্বপূর্ন সড়কের পাশের দোকানগুলোতে বিক্রি করতে দেখা যায়। পলিথিনের মজুদ, সরবরাহ, বিক্রয় ও ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও বাজারের মাছ, মাংস, মুদি দোকান, সবজির বাজার, অলি-গলি দোকানগুলোতে মিলছে পথিলিনের ব্যাগ।
বাজার আসা ক্রেতা রুম্মান বলেন, পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং দন্ডনীয় অপরাধ তা জানি। কিন্তু পলিথিন ব্যবহারে ঝামেলা কম। মানুষ এ কারণে এটি ব্যবহার করে। পরিবেশের জন্য পলিথিন ক্ষতিকর এটা জানা সত্ত্বেও সবাই তারপরও জেনে শুনে ব্যবহার করে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট খুলনার মুখ্য কর্মকর্তা ড. হারুনর রশিদ জানান, পলিথিন হলো একটি নন-বায়োডিগগ্রেটেবল বস্তু যা সহজে পচনশীল নয়। পলিথিন মাটির সঙ্গে মিশে অবিকৃত থাকায় মাটিতে যে পচনশীল ব্যাকটেরিয়া থাকে তা বাধাগ্রস্থ হয় এবং মাটিতে পচনশীল কাজে ব্যাঘাত ঘটে। এ ছাড়া পানি নিষ্কাষনে পলিথিন চরম ক্ষতি সাধিত করে। এ থেকে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। যা ভূ-গর্ভস্থ পানির সাথে মিশে পানিকে দূষিত করে পাশাপাশি ভূ-গর্ভস্থ জীব ও বিচিত্রকে হুমকির মুখে ফেলে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
পলিথিন বন্ধ ও নিষিদ্ধের ব্যাপারে সাবেক কাউন্সিলর এস.এম হুমায়ূন কবির জানান, পথিলিন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে। গণহারে চলছে পলিথিনের ব্যবহার। যা আমাদের পরিবেশের জন্য চরম ক্ষতি। পলিথিন ব্যবহারে পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। সকলকে পলিথিনের বিকল্প ব্যবহার করা মানষিকতা তৈরী করাসহ পলিথিনের বন্ধের বিরুদ্ধে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোঃ সাদিকুল ইসলাম জানান, খুলনাতে নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকে। যেহেতু সম্প্রতি সময়ে খুলনার বিভিন্ন বাজার সমূহে পলিথিনের ব্যবহারের বিস্তার পেয়েছে, এ বিষয়ে আইনের মধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। পলিথিনের ব্যবহার, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং জীব ও বিচিত্র হুমকির সম্মুখিন। সময়ের দাবি বন্ধ হোক পলিথিন, প্রান ফিরে পায় প্রকৃতি।
এদিকে আগামী ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে কোনো পলিথিন শপিং ব্যাগ ও পলিপ্রোপিলিনের ব্যাগ রাখা যাবে না এবং ক্রেতাদের দেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, বিকল্প হিসেবে সব সুপারশপে বা এর সামনে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ক্রেতাদের কেনার জন্য রাখা হবে। এখানে তরুণ/শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা হবে। গত সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পলিথিন শপিং ব্যাগের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। রিজওয়ানা হাসান বলেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এক সপ্তাহের মধ্যে সব সুপারশপের সঙ্গে সভা করে পাটের শপিং ব্যাগ সরবরাহ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে ১ অক্টোবরে শপিং ব্যাগে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার হবে। পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর ইএসডিওর সঙ্গে মিলে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিকল্প পরিবেশবান্ধব উপাদানে তৈরি/পাট/বস্ত্রের ব্যাগের উৎপাদনকারীদের নিয়ে একটি মেলার আয়োজন করবে। মেলায় সুপার শপের কর্তৃপক্ষ এবং উৎপাদনকারীরা নিজেদের চাহিদা এবং সরবরাহার বিষয়ে আলোচনা করতে পারবেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবরা, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, অন্যান্য মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন সুপার শপের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।