
প্রকৃতি অক্সিজেনের ভান্ডার। অক্সিজেন ছাড়া একটি সেকেন্ডও আমরা অচল। করোনা মহামারির পরিস্থিতিতে আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পেয়েছি অক্সিজেনের জন্য হাহাকার। খবরের কাগজ, টেলিভিশনে চোখ দিলেই দেখতে পেতাম অক্সিজেনের অভাবে মানুষ ছটফট করে মারা যাচ্ছে, পাশে থাকা প্রিয়জন শত চেষ্টা করেও কিচ্ছু করতে পারছেনা।
বিশ্বজুড়ে প্রকৃতি বিনষ্টের পেছনে আমরাই দায়ী। বিভিন্ন সময়ে অহেতুক গাছ-পালা কাটার ফলে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। ক্রমবদ্ধমান নগরায়ন আমাদের সবুজ প্রকৃতিকে নষ্ট করে দিচ্ছে। যা আপাত দৃষ্টিতে ডিজিটালাইজেশন মনে হলেও ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ। প্রতিদিন যে পরিমাণ গাছ নিধন হচ্ছে তাতে আগামীদিনে আমাদের অক্সিজেনের জন্য হাহাকার করতে হবে। প্রাণীকূল অক্সিজেন ছাড়া বাঁচতে পারে না, আর এই অক্সিজেনের পুরোটাই আসে গাছ-পালা থেকে।
গাছ-পালা, ফল-ফুল, বৃষ্টি, মাঠের ফসল, পাহাড়, আলো-বাতাস সহ সবই সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক সৃষ্ট প্রকৃতিক সম্পদ। পরিবেশের ভারসাম্য ও সুস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রকৃতিতে বিদ্যমান প্রতিটি প্রজাতির প্রাণী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জনসংখ্যার চাপ, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, উন্নয়ন কার্যক্রম, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, বনজ সম্পদ আহরণসহ নানা কারণে বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের হিসাব মতে, দেশের মোট ভূমির ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ বনভূমি হিসেবে চিহ্নিত থাকলেও প্রকৃত বন আচ্ছাদিত বনভূমির পরিমাণ আট ভাগের বেশি নয়।
এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স (ইপিআই)-২০১৮ এর তথ্য অনুযায়ী, ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৯তম, অর্থাৎ পরিবেশ দূষণ রোধে ব্যর্থ দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৮৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ৪ লাখ ১৬ হাজার ২৫৬ একর বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে, যার মধ্যে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩১ হেক্টর বনভূমি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৫৬ একর বনভূমি জবরদখলের শিকার হয়েছে। ক্রমবর্ধমান এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে বনভূমি ধ্বংসের কারণে এরই মধ্যে বন্যপ্রাণীর ৩৯টি প্রজাতি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ আরো প্রায় ৩০ প্রজাতির অস্তিত্ব মারাত্মক সংকটে রয়েছে, যা বনকেন্দ্রিক জীবনচক্র ও বাস্তুসংস্থানের জন্য অশনিসংকেত।
শিল্পকারখানা, ট্যানারি শিল্পের বর্জ্য নদ-নদী, খাল-বিলসহ প্রাকৃতিক জলাধারগুলোতে নিক্ষেপণের ফলে দেশের প্রাকৃতিক জলাধার বা জলজ জীববৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে বিনষ্ট করা হচ্ছে। জলাধারগুলো অবৈধ দখল এবং অপরিকল্পিত বসতি ও স্থাপনা নির্মাণের ফলে মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংসসহ জলজ জীববৈচিত্র্য প্রচন্ডভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। পরিবেশ আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে এসব অনিয়ম বন্ধ নিশ্চিত অত্যন্ত জরুরী।
বাংলাদেশের সংবিধানে ১৮(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে “রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যত নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ জীববৈচিত্র, জলাভূমি, বন ও বন্য প্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবে”। প্রকৃতি সংরক্ষণের দায়িত্ব কেবল সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোনো সংস্থার একার নয়। এ দায়িত্ব আমাদের, রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের।
তাই চলুন আমরা সকলেই বেশি বেশি বৃক্ষরোপণ করি, বনায়নের সৃষ্টি করি। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে অবদান রাখি, আমাদের পরিবেশ আমরাই রক্ষা করি। সেইসাথে অন্যদেরকেও পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য সচেতন করতে হবে, গাছ-পালা নিধন হতে বিরত থাকতে হবে।
শেখ রিফাদ মাহমুদ
চেয়াম্যান, এসআরআই ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন
উপদেষ্টা পর্ষদ সদস্য, গ্লোবাল স্টুডেন্ট ফোরাম