![](https://bdchitro.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
ফয়েজ আহমেদ মাহিন, চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি ::
বাংলাদেশের সূর্যসন্তান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আপোসহীন রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, জননেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রমের ৭৬তম জন্মদিন আজ (৩ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার)।
১৯৪৮ সালের এইদিনে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুরের সম্ভ্রান্ত চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পিতার নাম মরহুম আলী আহসান মিয়া ও মাতার নাম মরহুমা মোসাম্মৎ আক্তারুন্নেছা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর সেনানী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ২নং সেক্টরের ক্র্যাক প্লাটুনের কমান্ডার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন এবং বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অদম্য সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর বিক্রম’ উপাধিতে ভূষিত করে।
শিক্ষাজীবনে মিউজিক কলেজ থেকে আই মিউজিক পাশ করেন তিনি। এছাড়া জগন্নাথ কলেজ থেকে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইসলামের ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে পরবর্তীকালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির প্রতি অদম্য টান তাঁকে ছাত্ররাজনীতির প্রতি উৎসাহী করে তোলে। বিশেষ করে পাকিস্তান আমলে এদেশের মানুষের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের অন্যায়-অবিচার তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই দেশের স্বাধীনতা ও গণমানুষের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৬৫ সালে জড়িয়ে পড়েন ছাত্ররাজনীতিতে।
ঊনসত্তরের গণআন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, ‘৭১-এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের স্বাধীনতার উদ্দাত্ত ডাক, ‘৭১-এর মুক্তি সংগ্রাম – বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিবর্তনের প্রতিটি বাঁকে তিনি ছিলেন সক্রিয় কর্মী-যোদ্ধা-নেতা। ছিলেন জাতির পিতার আস্থাভাজন।
১৯৭১ সালে মোফাজ্জল হোসেন মায়া চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধকালীন ২নং সেক্টরের ক্র্যাক প্লাটুনের কমান্ডার হিসেবে বীরত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর এই গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাঁকে ‘বীর বিক্রম’ খেতাব দিয়ে সম্মানিত করে বাংলাদেশ সরকার।
মুক্তিযুদ্ধের পর বিধ্বস্ত দেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করতে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন নতুন এক যুদ্ধে, এ যুদ্ধ উন্নয়নের যুদ্ধ, দেশ পুনর্গঠনের যুদ্ধ, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার যুদ্ধ।
১৯৭৫ সালে যখন জাতির পিতাকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে একাত্তরের পরাজিত শক্তি, তখন বন্দি করা হয় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ আওয়ামী লীগের অনেক নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিকদের। তাঁদের রাখা হয় পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে তৎকালীন কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে বন্দি অবস্থায় মায়া চৌধুরী সাক্ষী হন ৩রা নভেম্বরের নির্মম জেলহত্যাকাণ্ডের। পরবর্তীকালে বিভিন্ন আলোচনা ও সভা-সেমিনারে তিনি সেই ভয়াল রাতের কথা সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন।
শুধু ‘৭৫ই নয়, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সাক্ষী হয়ে আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড ছুড়ে হত্যাচেষ্টারও। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক জনসভায় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামায়াত চক্র গ্রেনেড হামলা চালায়। সে সময় খোলা ট্রাকে স্থাপিত মঞ্চে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ছিলেন নেত্রীর পাশে। যখন হামলা শুরু হয়, তখন অনেক নেতা বাঁচার জন্য ট্রাক থেকে নেমে গেলেও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ আরো কয়েকজন মানবঢাল রচনা করে রক্ষা করেন জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাকে। তাঁদের সে অকুতোভয় প্রচেষ্টার জন্যই আজ বাংলাদেশ পেয়েছে এক সফল রাষ্ট্রনায়ককে, যার নাম আজ বিশ্বব্যাপী উচ্চারিত হয় অত্যন্
ত সম্মানের সঙ্গে। যিনি এ দেশকে আজ বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল-এ পরিণত করেছেন।
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ১৯৯৬ ও ২০১৪ সালে চাঁদপুর-২ আসন থেকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৭ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে ২০১৪ সালে তাঁকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম একসময় অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন।
ব্যক্তি জীবনে ২ ছেলে ও ১ মেয়ে (৩ সন্তানের) জনক। তার সহধর্মিনী মহুয়সী নারী মিসেস পারভীন চৌধুরী মতলব উত্তর-মতলব দক্ষিণ উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের প্রধান উপদেষ্টা। তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দিপু ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। তার পুত্রবধু সুবর্ণা চৌধুরী বীনা চাঁদপুর জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-আহবায়ক। তার নাতি আশফাক হোসেন চৌধুরী মাহি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি। আজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, মানবহিতৈষী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রমের ৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষে মতলব উত্তর উপজেলা ও ছেংগারচর পৌর আওয়ামী লীগ,অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের উদ্যোগে নানা আয়োজনে প্রিয় নেতার জন্মদিন পালনের ব্যাপক কর্মসুচি গ্রহণল করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় কেক কাটা,মিলাদ দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রমের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন এবং জন্মদিন উপলক্ষে অফুরন্ত শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও আগামী দিনের পথ চলার শুভকামনা জানানো হয়। এদিকে সকাল থেকেই পরিবার, ভক্ত, অনুসারী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত করেছেন জনপ্রিয় ও জনহিতৈষী এই রাজনীতিককে। তার বাসায় ফুল ও অন্যান্য উপহারসামগ্রী নিয়ে ভিড় করছেন অনেকে। তিনি সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।
জাতির যে কোনো সংকটকালে অগ্রনী ভূমিকা পালনকারীদের অন্যতম মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছে স্টার সংবাদ ও চাঁদপুর টেলিভিশন। তিনি স্টার সংবাদের সম্পাদক ও প্রকাশক।
নিজের জন্মদিন নিয়ে বিশেষ কোন পরিকল্পনা ছিলো না তার। তার জন্মদিনে দলীয় নেতাকর্মীদেরকে শুধু দোয়া করার জন্য বলেছেন। শুভাকাঙ্খি ও দলের নেতাকর্মীরা তার জন্মদিনে কেক কাটা,মিলাদ ও দোয়ার গৃহিত নানান আয়োজন করায় নেতাকর্মীদেরকে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।