‘প্রাণ হাতে’ নিয়ে শ্রেণিকক্ষে খুলনার শিক্ষার্থীরা!

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

জরাজীর্ণ ভবন, ভাঙাচোরা অবকাঠামো, ক্লাসরুম সংকটের মধ্যে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে। এসব নানা সংকটে অনেক স্কুলে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করছেন শিক্ষকরা। অনেক স্থানে ক্লাস রুম সংকটে ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীও।

খুলনা নগরীর গোয়ালখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য একটি একতলা ভবন, যেখানে মাত্র তিনটি কক্ষ। একটিতে আবার প্রধান শিক্ষক ও অন্য শিক্ষকদের বসার স্থান। বাকি দুটি রুমে পর্দা দিয়ে করা হয়েছে চারটি রুম। ক্লাস রুম সংকটে বাধ্য হয়ে পরিত্যক্ত একটি ক্লাব ভবনে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এতে শিক্ষার পরিবেশ মারত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মতো জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বড় একটি অংশ ভুগছে শ্রেণিকক্ষ সংকটে। এই যেমন খুলনা নগরীর খালিশপুরের ন্যাশনাল স্কুল। এখানে শ্রেণিকক্ষের অভাবে অফিস রুমও ব্যবহৃত হচ্ছে শ্রেণিকক্ষ হিসেবে। মাধ্যমিক স্কুলের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হলেও অন্য ভবনটিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম সংকটে গাদাগাদি করে বসতে হয়।

খুলনা মহানগরীর শুধু এ দুটি স্কুল নয়, পুরো জেলা আর বিভাগজুড়ে এমন সংকট রয়েছে অসংখ্য স্কুলে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস অন্তত ২৫টি স্কুল ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এসব সংকটের কারণে বিভাগের ১০ জেলায় ৬৩০টি প্রাথমিক স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে ৬১ স্কুলের। ভবন নির্মাণে অনেক স্থানে কাজে ধীরগতি, কোথাও আবার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ সংকটের আশু সমাধান দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। এতে কোথাও কোথাও ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থী।

ন্যাশনাল আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল হাসান বলেন, ‘আমাদের ভবনটি দীর্ঘদিন ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। অনেক চেষ্টার পর ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ ছিল, এখন নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে। ফলে একটি মাত্র ভবনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্তরের সব ক্লাস নিতে হচ্ছে। একটি মাত্র কক্ষে প্রধান শিক্ষকসহ অন্য সব শিক্ষক বসেন, এতে দাপ্তরিক কাজও ব্যাহত হয়। নিচে প্রাথমিকের অফিস রুমেই ক্লাস হয়। এখন দ্রুত ভবন নির্মাণ শেষ না করতে পারলে আমাদের এ সমস্যার সমাধান হবে না।

গোয়ালখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির সমস্যা আরও প্রকট। একটি মাত্র একতলা ভবনে মাত্র তিনটি কক্ষ। ফলে ৭টি শ্রেণিকে ক্লাস করানো সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়ে পাশের একটি পরিত্যক্ত ক্লাব ভবনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হয়। এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাসিনা বানু বলেন, ‘আমরা যে কি ঝুঁকির মধ্যে আছি। বাচ্চাদের নিয়ে আমাদের সব সময় টেনশন হয়, কখন না আবার ভবন ভেঙে পড়ে। আমাদের দুটো নতুন রুম, পর্দা দিয়ে মাঝে আলাদা করা। তবে সেভাবে ক্লাস করানো কষ্টকর। আর পাশের পরিত্যক্ত ভবন তো ক্লাস করার কোনো অবস্থাতেই নেই। এসব কারণে আমাদের স্কুল থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে।’

যদিও সংকট সমাধানে জরুরিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগেুলো চিহ্নিত করে মেরামত, নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ এবং চলমান কাজে গতি বাড়ানোর আশা কর্তৃপক্ষের।

Share This Article