পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় চিন্তিত সিএমপি

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের পর গ্রেপ্তার অভিযানে গিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে কোপানোর ঘটনা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশকে। সোমবার (১১ আগস্ট) দিবাগত রাত ২টায় বন্দর থানা এলাকায় সংঘটিত এ ঘটনা আসন্ন ১৫ আগস্ট ঘিরে ব্যাপক নাশকতার বার্তা কিনা তা খতিয়ে দেখছে নগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ।

যদিও নগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দিনটি ঘিরে  কোনো অপতৎপরতা ও নাশকতার শঙ্কা নেই। তবে দিনটি ঘিরে  যেকোনো অপতৎপরতা প্রতিরোধে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ সজাগ থাকবে। মোতায়েন করা হবে বাড়তি পুলিশ ফোর্স। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেল ৩টার দিকে দেশ রূপান্তরকে এই তথ্য জানিয়েছেন নগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন।

সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বন্দর থানার সল্টগোলা ক্রসিং ঈশান মিস্ত্রি হাট এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। খবর পেয়ে  সেখানে অভিযানে যান এসআই আবু সাঈদসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। সেখানে এসআই আবু সাঈদের মাথা ও ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ  দেওয়ার ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত ওই পুলিশ সদস্য বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে ঘটনার পর ঈশান মিস্ত্রি হাট এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সবশেষ তথ্য জানতে মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে একাধিবার কল করলেও মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি নগর পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপকমিশনার আমিরুল ইসলাম। তবে মঙ্গলবার বিকেলে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘পুলিশ সদস্যের ওপর হামলার ঘটনায় ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও সন্ত্রাস দমন আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার ১৮জন নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।  সোমবার রাত পৌনে ১২টা থেকে মঙ্গলবার  ভোর ৪টা পর্যন্ত বন্দর থানার বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে ১৫ আগস্ট  শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গসংগঠনের  নেতাকর্মীরা চট্টগ্রাম শহরে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না সেই বিষয়টিও নজরে রাখছেন চট্টগ্রামের গোয়েন্দারা। নগর পুলিশের উপকশিনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন বলেন, দিনটি (১৫ আগস্ট) ঘিরে এখন পর্যন্ত নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সম্ভাব্য নাশকতার কোনো তথ্য নেই। তবে দিনটি ঘিরে সারা  দেশের মতো চট্টগ্রাম শহরেও নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

নগর পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ১৫ আগস্ট ঘিরে সুনির্দিষ্ট  কোনো নিরাপত্তা হুমকি না থাকলেও ঝটিকা মিছিল ও অন্যান্য অপতৎপরতা চালানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ জন্য  চেকপোস্টের সংখ্যা বাড়ানো, মোবাইল  পেট্রোলিং আরও তৎপর করা ও অপতৎপরতার জন্য হুমকি হতে পারে আওয়ামী লীগের এমন  লোকদের চিহ্নিত করে  গ্রেপ্তার অভিযান আরও সক্রিয় করার উদ্যোগ  নেওয়া হয়েছে। ‘১৫ আগস্ট ঘিরে  নেতাকর্মীদের নতুন করে শোকের আবহে সংঘবদ্ধ করতে চায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ’ বলেন সিএমপির এক কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করে নগর পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠন যাতে ঝটিকা মিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা। যদিও অনেক আগেই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নগর পুলিশকে  কঠোর নির্দেশনা  দেওয়া হয়েছিলো। কয়েক দিন পরপর ওই নির্দেশনা যথাযথ পালনের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া নিষিদ্ধ দলের দলের সম্ভাব্য অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে তাগাদাও দেওয়া হচ্ছে।

গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় চার শতাধিক আওয়ামী ক্যাডারকে কর্মশালার নামে  ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। ওই ট্রেনিংয়ে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন থানা থেকে অন্তত একডজন নেতাকর্মী অংশ নিয়েছিলো। তারা আয়ত্ত  করেছে নাশকতার বিভিন্ন উপায় ও হামলার কৌশল। প্রশিক্ষিত কর্মীদের কাজ হবে নির্দেশনা অনুযায়ী ‘হিট অ্যান্ড রান’ পদ্ধতিতে কাজ করা।

 

Share This Article