ইন্দোনেশিয়া কেন উত্তপ্ত হলো? – Latest BD News

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

ইন্দোনেশিয়া গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সংসদ সদস্যদের জন্য মাসিক ৫০ মিলিয়ন রুপি বা প্রায় ৩ হাজার মার্কিন ডলারের আবাসন ভাতা অনুমোদনের খবর প্রকাশের পর থেকেই জনরোষ বিস্ফোরিত হয়। এ ভাতা দেশের ন্যূনতম মজুরির ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি, যা দারিদ্র্যপীড়িত জনগণের সঙ্গে ক্ষমতাশালী রাজনীতিকদের ব্যবধান স্পষ্ট করে দিয়েছে। খবর আল জাজিরার।

দেশটিতে অর্থনৈতিক বৈষম্যের এই বাস্তবতা নতুন কিছু নয়। তবে পরিস্থিতি সহিংস রূপ নেয় যখন ২১ বছর বয়সী ফুড ডেলিভারি কর্মী আফফান কুরনিয়াওয়ান পুলিশের গাড়ির চাপায় নিহত হন। বিক্ষোভে যোগ না দিয়ে তিনি কেবল খাবার পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন। সেসময় তার মৃত্যু হয়। আফফানের এই মৃত্যুই জনমনে জমে থাকা ক্ষোভকে আরও তীব্র করে তোলে। আফফানের গল্প ইন্দোনেশিয়ার কোটি কোটি স্বল্প আয়ের মানুষের প্রতিচ্ছবি—যারা অনিশ্চিত আয়ের মধ্যে প্রতিদিন বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।

আফফানের মৃত্যুর পর দেশটির রাজধানী জাকার্তা থেকে শুরু করে সুমাত্রা, সুলাওয়েসি, কালিমান্তান ও বালির রাস্তায় মানুষ নেমে আসে। তাদের আটকাতে টিয়ার গ্যাস, জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এসমময় একাধিক স্থানে সংঘর্ষ এবং সরকারি ভবন ও সংসদ সদস্যদের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভ দমনে দেশটির সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।

বিক্ষোভকারীরা শুধু অতিরিক্ত ভাতার বিরুদ্ধেই নয়, বরং সামগ্রিক বৈষম্য, দুর্নীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। অনেকের মতে, প্রতিবার নির্বাচনের আগে রাজনীতিবিদরা নানা প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু ক্ষমতায় বসার পর সাধারণ মানুষকে ভুলে যান। নারীবাদী কর্মীরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার হরণের অভিযোগ তুলছেন।

অন্যদিকে আচেহর মতো অঞ্চলগুলোতে নতুন সেনা ব্যাটালিয়ন স্থাপনের পরিকল্পনার বিরুদ্ধেও আন্দোলন হচ্ছে, যা সামরিক প্রভাব বৃদ্ধির আশঙ্কা বাড়িয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট প্রাবোও নির্বাচনী প্রচারণায় প্রবৃদ্ধি ও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও ক্ষমতায় এসে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোতে বড় কাটছাঁট করেছেন। তার জনপ্রিয়তা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখনও পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সুযোগ আছে। দুর্নীতি দমন, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের দায়ীদের শাস্তি এবং স্বচ্ছ শাসন ব্যবস্থা চালু করলেই কেবল জনআস্থা কিছুটা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

চাপের মুখে দেশটির সংসদ আবাসন ভাতা বাতিল, বেতন বৃদ্ধি স্থগিত এবং অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে এতেই যে ক্ষুব্ধ জনতার মন শান্ত হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। ইন্দোনেশিয়ার ২৮ কোটিরও বেশি মানুষ এখন অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বৈষম্য ও সামরিক প্রভাব বিস্তারের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। জনগণের দাবি স্পষ্ট—মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে, শাসন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে হবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

Share This Article