
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের সাধারণ বিতর্ক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিবেন তিনি।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪টার দিকে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে তিনি রওনা হবেন বলে জানা গেছে। সফর শেষে তিনি আগামী ২ অক্টোবর দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
এবার তার সফরসঙ্গী হিসেবে যাচ্ছেন চারজন রাজনীতিবিদ। তারা হলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমিরর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখবেন। তিনি তার বক্তব্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে বিগত এক বছরে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সংস্কার ও আগামী দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশগুলো হতে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর এবং সর্বোপরি ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস তার বক্তব্যে উঠে আসবে।
প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ মহাসচিবের স্বাগত অভ্যর্থনা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভ্যর্থনাসহ এ সফরকালে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।
জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার স্টাব, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কোফ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যামি পোপ, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার-বিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যানড্রুজ, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এছাড়া ইতালি, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, কসভোর প্রতিনিধি দলের প্রধানের সঙ্গেও বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতি চলমান আছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এ বছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এবার আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। রোহিঙ্গা সঙ্কটকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘ কর্তৃক সাধারণ পরিষদে এমন একটি উচ্চ-পর্যায়ের সভার আয়োজন এবারই প্রথম।
জাতিসংঘ অধিবেশন ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের নিয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বেশ কয়েকটি বৈঠক করবেন। এর মধ্যে বিশেষভাবে রয়েছে কমনওয়েলথ পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রীদের সভা (সিএফএএমএম), শান্তি নির্মাণ কমিশন (পিবিসি) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক, গ্রুপ অব ৭৭ এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক, মহিলা, শান্তি ও নিরাপত্তা (ডাব্লুপিএস) ফোকাল পয়েন্ট নেটওয়ার্কের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক, ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বার্ষিক সমন্বয় সভা (এসিএম), সিআইসিএ’র অনানুষ্ঠানিক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক, বিমসটেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক, স্বল্পোন্নত উন্নয়ন মন্ত্রী পর্যায়ের প্রভৃতি।