আসিয়ান বাজারে রপ্তানির সোনালী সুযোগ

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

malaysia news
বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) হলে শুধু মালয়েশিয়াতেই নয়, আসিয়ান অঞ্চলের বিশাল বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানির নতুন দুয়ার খুলে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হয় ২৯৩ দশমিক ৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য, অথচ আমদানি হয় দুই হাজার ৬০৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি বিপুল আকার ধারণ করেছে।
বাংলাদেশি পণ্যের প্রধান অন্তরায় উচ্চ শুল্ক। ভারত, পাকিস্তান ও চীনের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে শুল্কমুক্ত বা স্বল্প শুল্ক সুবিধা পেলেও, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর এখনো সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। এতে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য ও তৈরি পোশাক খাত প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, “মালয়েশিয়ায় রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাধা ব্যবসায়িক চুক্তি না থাকা। এফটিএ হলে আমরা ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে খাদ্যপণ্যের বাজার ধরতে পারব। এতে প্রাণের পণ্যের রপ্তানি পাঁচগুণ বাড়বে।”

পিনাকল ফুডসের এমডি সেলিম ভূঁইয়া জানান, “উচ্চ শুল্কের কারণে প্রতিযোগিতা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এফটিএ হলে দাম কমিয়ে বড় অর্ডার পাওয়া সম্ভব হবে। মালয়েশিয়া আমাদের জন্য আসিয়ান অঞ্চলের প্রবেশদ্বার।”

বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোসাম্মাত শাহানারা মনিকা বলেন, “শুল্ক ও বিধি-নিষেধ সহজীকরণ ছাড়া টিকে থাকা কঠিন। তবে এফটিএ নিয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হতে পারে।”

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক বেবি রানি কর্মকার জানান, ইপিবি ও মালয়েশিয়ার জাতীয় বাণিজ্য সংস্থা ম্যাট্রেডের মধ্যে তথ্য বিনিময় ও বাণিজ্য মিশনের জন্য ইতিমধ্যে (১৯ সেপ্টেম্বর) একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

বাংলাদেশের রপ্তানি মূলত পোশাকনির্ভর হলেও কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পাটজাত পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্লাস্টিক সামগ্রী এবং হালাল পণ্যে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সুপারশপে ইতোমধ্যেই প্রাণসহ একাধিক ব্র্যান্ডের বাংলাদেশি পণ্য শোভা পাচ্ছে।

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মাহবুব আলম শাহ বলেন, “৩০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে টিকে থাকা সম্ভব নয়। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিই একমাত্র সমাধান।”

ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, মালয়েশিয়ায় বাজার সম্প্রসারণ সম্ভব হলে আসিয়ানের ৬৬ কোটি মানুষের সম্মিলিত বাজারে প্রবেশ সহজ হবে। মালয়েশিয়া ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে এ অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া এফটিএ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের রপ্তানির চিত্র বদলে যেতে পারে। শুধু মালয়েশিয়া নয়, আসিয়ান বাজারের বিশাল সুযোগও খুলে যাবে, যা দেশের অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করতে বড় ভূমিকা রাখবে।



ভালো সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ ফিডটি অনুসরণ করুন


Google News

Share This Article