নির্বাচনের আগে মানবাধিকার কর্মীদের সফরের আমন্ত্রণ ড. ইউনূসের

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘সংকটময় সময়ে’ বাংলাদেশ সফর অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

নিউইয়র্কে হোটেলে শীর্ষ মানবাধিকার কর্মীদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আপনারা সফর চালিয়ে যান। প্রতিবার আপনারা আসলে চাপা পড়ে যাওয়া ইস্যুগুলো সামনে আসে। বলা যায় আপনারাই মানুষের কণ্ঠস্বর।’

রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডির নেতৃত্বে এই বৈঠক প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়।

প্রফেসর ইউনূস প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন, গুরুত্বপূর্ণ খাতে চলমান সংস্কার উদ্যোগ এবং মানবাধিকার উদ্বেগ নিরসনে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি ভেঙে পড়া একটি ব্যবস্থা দিয়ে শুরু করেছিলাম। আমরা জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম গত বছরের হত্যাকাণ্ডগুলো তদন্ত করতে এবং তাদের প্রতিবেদনে অনেক কিছু উন্মোচিত হয়েছে। এরপর থেকে আমরা একটি জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি—এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।’

তিনি আরও জানান, গুমের ঘটনার তদন্তে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মানুষ ভীতিকর সব অভিজ্ঞতা নিয়ে সামনে আসছে—একটি ঘটনাই যথেষ্ট ভয়াবহ। বছরের পর বছর ভয়ঙ্কর সব ঘটনা ঘটেছে। মানুষকে আয়নাঘরে আটকে রাখা হয়েছিল, কখনও তারা জানতও না কেন সেখানে ছিল। কমিশন এখনও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়নি, তবে নিয়মিত হালনাগাদ পাওয়া যাচ্ছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১১টি কমিশন গঠন করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য। একটি জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন বর্তমানে সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে কাজ করছে। 
‘যে রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে তারাও এই প্রক্রিয়ার অংশ। অক্টোবরের মধ্যে জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হোক অবাধ ও শান্তিপূর্ণ—যা বাংলাদেশ কখনও প্রকৃত অর্থে পায়নি। বহু বছর ধরে ভোটার তালিকা এমন লোকজন দিয়ে পূর্ণ ছিল যারা কখনও ভোটই দেয়নি। এবার আমরা তাদের স্বাগত জানাতে চাই, বিশেষত নারীদের এবং তাদের অংশগ্রহণকে উদযাপন করতে চাই। আমরা ভোটদানের প্রক্রিয়া বোঝাতে একটি বড় প্রচারণা চালাবো। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশ ইতিহাসে সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি।’

তবে তিনি সতর্ক করেন, কিছু আন্তর্জাতিক মহল নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে কিছু শক্তি বদ্ধপরিকর। আমরা জানি না কারা কার হয়ে কাজ করছে। প্রচুর অর্থ ঢালা হচ্ছে, যার সুবিধাভোগী আছে বাংলাদেশে ও দেশের বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই। তারা খুব ভালোভাবে প্রস্তুত—এটাই সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয়। আগামী কয়েক মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

ড. ইউনূস মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধেও কথা বলতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনার আইনি প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। আমি আশা করি মানবাধিকার সংগঠনগুলো আওয়াজ তুলবে, যাতে ব্যাংকগুলো চুরি করা সম্পদ লুকাতে না পারে। এটি প্রকৃতপক্ষে জনগণের অর্থ।’

Share This Article