জুলাই সনদে নেই নব্বইয়ের গণআন্দোলন

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

১৯৪৭ থেকে ২০২৪। পূর্ব বাংলা, পশ্চিম পাকিস্তান হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি ও তার আগে-পরের নানা রাজনৈতিক ঐতিহাসিক বাঁক-পরিবর্তনের কথা জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫-এ গুরুত্ব পেয়েছে। সনদের পটভূমিকায় ২০২৪ সালে সংঘটিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে সবিস্তারে। ব্যতিক্রম হয়েছে নব্বইয়ের গণআন্দোলনের ক্ষেত্রে। এ প্রসঙ্গ সনদের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। পাশাপাশি সনদ প্রণয়নে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ৩৩টি দলের মতামত নেওয়া হলেও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত অন্তত ২৮টি দলের মতামত নেওয়া হয়নি। দেশের একটি বড় অংশের রাজনৈতিক মতামত ছাড়া জুলাই জাতীয় সনদের দীর্ঘস্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন দলের নেতারা।

বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা জানিয়েছেন, দীর্ঘ ৯ বছর ধরে দেশের রাজনৈতিক দল ও গণতন্ত্রকামী জনগণের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর ১৯৯১ সালে শাসনরীতিতে যে পরিবর্তন আসে, তা অনুপস্থিত জুলাই সনদে। রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারায় ফিরেছিল দেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের কোনও রাজনৈতিক সংকটে প্রথম সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষমতা দেখিয়েছিল তৎকালীন রাজনৈতিক শক্তিগুলো।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীতে সংসদীয় পদ্ধতির বদলে রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতি চালু করে। এরপর ১৯৯১ সালের আগ পর্যন্ত দেশের শাসনরীতি সেভাবেই চলছিল। আশির দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি সরকার গঠন করলে শাসনপদ্ধতিতে বদল আনে। সংসদে পাস হয় দ্বাদশ সংশোধনী। ওই সংশোধনীই দেশের ইতিহাসে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম ঐকমত্য দেখায়। এই রীতিতেই এখন দেশের শাসনরীতি চলছে।

 জুলাই সনদ নিয়ে বুধবার জরুরি বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজ (বুধবার) রাতে সনদ নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক আছে। আশা রাখি এই প্রসঙ্গে দল সিদ্ধান্ত জানাবে। ইতোমধ্যে কমিশনকে আমরা জানিয়েছি, কিন্তু কমিশন তা আমলে নেয়নি।’

বুধবার বিকালে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না এ প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি নিজেও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এই বিষয়টি উল্লেখ করেছি। এখন তারা তাদের মতো করেছে। আমি আলোচনায় নব্বইয়ের গণআন্দোলনের প্রসঙ্গটি যুক্ত করতে বলেছি। কমিশন এটা উল্লেখ করেনি।’

এ বিষয়ে নব্বইয়ের গণআন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় ছাত্রনেতা আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘‘যুগে যুগে সব আন্দোলনের ফয়সালা হয়েছে রাজপথে। আমাদের দেশের সব ঐতিহাসিক আন্দোলনের ফায়সালাও হয়েছে রাজপথে। আমাদের শহীদ সালাম, বরকতের রক্তে রঞ্জিত ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে মাতৃভাষা পেয়েছি; ৬২-এ শিক্ষা আন্দোলনেও  মোস্তফা ওয়াজিল্লাহ, বাবুলের রক্তের বিনিময়ে আমরা শিক্ষার অধিকার পেয়েছি।’’

‘‘৬৯  এর গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে শহীদ আসাদের রক্তে রাজপথে; এরপর আমরা রাজপথে ফায়সালার মাধ্যমে ভোটের অধিকার না দেওয়ায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। এই ধারাবাহিকতায় নব্বইয়ে রাজপথে শহীদ নূর হোসেন, ডা. আসাদের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সফল হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সেদিন জাতি পেয়েছিল স্বৈরাচারমুক্তি, দেশের গণতন্ত্র প্রবেশ করেছিল সংসদীয় শাসনরীতিতে।’’

‘‘এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বেগম জিয়া, তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনে শত শত তরুণ প্রাণ দিয়েছে। এই ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানেও ছাত্রজনতার প্রাণের বিনিময়ে রাজপথেই এসেছে ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান।’’

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘১৯৫২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ঐতিহাসিক সব আন্দোলন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, দেশের রাজনীতি ও সভ্যতা নির্মাণ করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এসব ঘটনা জুলাই সনদে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু জুলাই সনদে নব্বইয়ের গণআন্দোলনের বিষয়টি আসেনি। এসব কিছু সনদে থাকা প্রয়োজন ছিল।’

বিএনপি নেতা আমান মনে করেন, শুক্রবার সনদে সই হলেও এর আগেই নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান ও তার পরবর্তী সংসদীয় পদ্ধতিতে শাসনরীতিতে প্রবেশের ঘটনাটি ঐতিহাসিক এবং তা যুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না। জিয়াউর রহমানকেও মুছে ফেলার চেষ্টা ছিল, কিন্তু সম্ভব হয়নি, হবে না।

আগামী শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদে সই করবে রাজনৈতিক দলগুলো। সরকারি আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন মুহাম্মদ বৈঠক এই প্রতিবেদন লেখার সময় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আকস্মিক এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে রাজনৈতিক নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগটির জন্য।

তবে জুলাই সনদের ফাইনাল প্রস্তাব মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন কোনও মতামত নেওয়া হবে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

১৯৪৭ থেকে ২০২৪

জুলাই জাতীয় সনদের পটভূমিকায় বলা হয়েছে, ‘‘প্রায় দুইশত বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে নিপীড়িত জনগণের দীর্ঘ লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাকিস্তান নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় এবং পূর্ব-বাংলা তার অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরশাসন, শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে পূর্ব-বাংলার জনগণ সংক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং তৎপরবর্তী ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধিকার-সংগ্রামের বাস্তব প্রতিফলন ঘটে।’’

‘‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে হানাদার বাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ জনগণের ওপর বর্বরোচিত গণহত্যা শুরু করলে পরদিন ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পরিণতিতে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই স্বাধীন দেশের অভ্যুদয় ঘটে। মহান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতিকে ধারণ করে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের যে আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছিল, দীর্ঘ ৫৩ বছরেও তা পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। শাসন ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও সংস্কৃতি বিকাশের ধারা বারবার হোঁচট খেয়েছে।’’

‘১৯৭৫ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়। ওই বছরই এক সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে সংঘটিত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মাধ্যমে সেই ব্যবস্থার পতন ঘটে। নানামুখী রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৮ সালে বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের উদ্যোগের ফলে ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশ আবারও গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন করে। কিন্তু সেই গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। যে কারণে বিগত পাঁচ দশকে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরোপুরি টেকসই ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করা যায়নি এবং এগুলো অত্যন্ত ন্যুব্জ ও দুর্বলভাবে কাজ করেছে।’’

এরপর উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে লগি-বৈঠা তাণ্ডবে দেশে কয়েকটি নৃশংস রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় এবং সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি ও একটি অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১/১১ সরকার নামে পরিচিত। যার ফলে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়।’’

‘‘২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে বিশেষ ব্যক্তি, পরিবার ও গোষ্ঠী বন্দনার জন্য নিবেদিত রাখা হয়। … বস্তুতপক্ষে, রাষ্ট্রকাঠামোতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অবারিত সুযোগ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বিগত ১৬ বছরে দলীয় প্রভাবকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকর, জবাবদিহিবিহীন ও বিচারহীনতার সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল।’’

‘‘এই পটভূমিকায় রাজনৈতিক দলগুলোর তথা জনগণের দীর্ঘ ১৬ বছরের ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সরকারি চাকরিতে কোটা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং অবশেষে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের এক দফা আন্দোলনে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-শ্রমিক-নারী-পেশাজীবী তথা ফ্যাসিস্টবিরোধী রাজনৈতিক দল এবং সকল স্তরের জনতার অংশগ্রহণের ফলে এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়।’’ যা বলা হয় সনদের পটভূমি-১-এ।

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক নেওয়া হয়নি নিবন্ধিত অন্তত ২৮ দলের মতামত, স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয়

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশের ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা ও বিশিষ্টজনদের মতামত নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করেছে। তবে বিগত আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ), জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ১৪ দলের শরিকদের ‘ফ্যাসিস্টদের সহযোগী’ হিসেবে মতামত নেওয়া হয়নি।

মতামত গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে নানা সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিয়াজোঁ করা অনেক রাজনৈতিক দল। এমনকি বিগত দুই টার্মে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনও জোট বা লিয়াজোঁ করেনি, এমন দলগুলোও বাদ পড়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাপ, ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি রয়েছে।

ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনসিপি) সভাপতি শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য চিঠি দিয়ে কমিশনকে জানিয়েছি। জাতীয় প্রেসক্লাবের কর্মসূচিতে এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছি। তারপরও আমাদের বাদ দিয়ে তারা কী ধরনের ঐকমত্যে পৌঁছাবেন তা জানা নেই।’’

মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ইসলামি দল হওয়ায় ডাক পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ইসলামি দল হওয়ায় ডাক পাইনি। কারণ, কমিশন চলে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ও তাদের লোকজন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত এনসিপির কথায়।’’

বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি আইভি রহমান বলেন, ‘‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কেন ডাকেনি, তা আমরা বলতে পারছি না। তবে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করছি।’’

বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল খায়ের বলছেন, বিগত ১৪ ও ২৪ সালের নির্বাচনে তারা যাননি। তিনি বলেন, ‘‘তারপরও কমিশন আমাদের কেন আমন্ত্রণ জানায়নি, তা বোধগম্য নয়। মূলত আমরা ৭২ সালের সংবিধান পুরোপুরি বাতিল চেয়েছি, তাই হয়তো আমাদের পছন্দ করেনি।’’

বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির যুগ্ম মহাসচিব মহসীন ভূইয়া বলেন, ‘‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নিজেই একটি অনৈক্যের উদাহরণ তৈরি করেছে। আমরা মনে করি, নিজের মনমতো করে গুটিকয়েক দল নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য হয় না। আমি বলবো, এটি জাতীয় বৈষম্য কমিশন। এই কমিশন জুলাই বিপ্লবের চেতনার পরিপন্থি ও অগ্রহণযোগ্য।  জুলাই বিপ্লবের পক্ষের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নিয়ে এই কমিশন গঠন হয়নি।’’

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব আসলাম হোসাইন বলেন, ‘‘আমরা আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে গিয়েছি এটা সত্য। তবে আমরা তাদের দোসর ছিলাম না। ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৮ জুলাই আমাদের দলীয় চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারি বিবৃতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়েছেন। তারপরও আমাদের না ডাকা দুঃখজনক।’’

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)-এর চেয়ারম্যান শাহ জাফর বলেন, ‘‘আমরা নিবন্ধিত দল হলেও কমিশন আমাদের কাছে মতামত চায়নি। ভবিষ্যতে হয়তো এ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।’’

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাঈম জানান, তাদের কাছে চিঠি দিয়ে মতামত চেয়েছে ঐকমত্য কমিশন। পরে ডেভেলপমেন্ট পার্টি চিঠি দিলেও তাদের বৈঠকে ডাকা হয়নি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘‘যারা আওয়ামী লীগের মহাজোট, ১৪ দলের যারা তারা বাইরে আছে। যারা ফ্যাসিস্ট রেজিমের অংশ ছিল—যখন ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়, তাদের তো যুক্ত করার বিষয় ছিল না। এটা তো খুব নরমাল ও ন্যাচারাল।’’

সাইফুল হক জানান, এর বাইরেও কিন্তু অনেকে আছে যারা যুক্ত হয়নি, যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে—জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল আছে, কমিউনিস্ট লীগ আছে, তারা তো যুক্ত হয়নি।’’

আদালতে না যাওয়ার প্রতিশ্রুতি কি বাস্তবসম্মত?

জুলাই সনদে ‘বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা’য় আদালতে না যাওয়ার বিষয়টিও প্রশ্ন তৈরি করেছে। আর এ ক্ষেত্রে সনদ বাস্তবায়নে দীর্ঘস্থায়িত্ব নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা। বিষয়টি ভবিষ্যতে কোনও কাজে আসবে কিনা, এ নিয়েও বিএনপির কোনও কোনও নেতা প্রশ্ন তোলেন। তবে এক্ষেত্রে দলের অবস্থান না জেনে তার উদ্ধৃত হতে চাননি।

অঙ্গীকারনামার সাত দফার তিন নম্বর অঙ্গীকারে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনও আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করবো না। উপরন্তু, এই সনদ বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবো।’’

আদালতে না যাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক ন্যায্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কিনা, এ বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।

যদিও সাইফুল হক মনে করেন, এটি একটি জেন্টেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টের অংশ। যেহেতু আমরা স্বাক্ষর করছি, তাই দলগতভাবে নৈতিক ইয়ে নাই, আদালতে যাওয়ার।

‘‘কিন্তু মানুষ তো যেতে পারে, বাকিরা সবাই যেতে পারে, যারা সাইন করবে না তারা যাবে না। বাকিরা সবাই যেতে পারে, সে সুযোগ আছে, সেটা তো নাগরিক অধিকার। সনদ নিয়ে সমালোচনা থাকে, আপত্তি থাকে, নাগরিকেরা সংক্ষুব্ধ হন, তাহলে তো নিশ্চয়ই আদালতে যাবেন। এটা কোনও কর্তৃপক্ষ হরণ করতে পারে না’’- যোগ করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

Share This Article