
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া এলাকায় ‘এ.ডি.এ মিউজিক অ্যাপস’ নামের এক প্রতারণামূলক অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শতাধিক মানুষের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষিকা নিজেকে অ্যাপটির ব্যবস্থাপক পরিচয় দিয়ে উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে এই প্রতারণা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
জানা যায়, ডাকাতিয়া শহীদ স্মৃতি বিদ্যানিকেতনের শিক্ষিকা মোসাঃ নাইমা সিফাত বন্যা নিজেকে ‘এ.ডি.এ মিউজিক অ্যাপস’-এর ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি স্থানীয়দের বিভিন্ন রকম বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা বলে অর্থ সংগ্রহ করতেন। বিনিয়োগের বিনিময়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট হারে মুনাফা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
বিনিয়োগের স্কিম অনুযায়ী ৩,৮০০ টাকায় প্রতিদিন ১২৫ টাকা, ১০,০০০ টাকায় প্রতিদিন ৩৩০ টাকা, এবং ২৮,৮০০ টাকায় প্রতিদিন ১,০০০ টাকা পর্যন্ত রিটার্ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
অ্যাপটির নাম শুনে অনেকেই ভেবেছিলেন এটি কোনো অনলাইন মিউজিক বা আয়ভিত্তিক বিনোদনমূলক প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু বাস্তবে তা ছিল একটি প্রতারণামূলক চক্রের অংশ—যা এখন ভালুকার বহু পরিবারের জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ ও হতাশা।
ডাকাতিয়া শহীদ স্মৃতি বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক ও ভুক্তভোগী মোঃ আব্দুল খালেক বলেন,“নাইমা সিফাত বন্যা প্রথমে নানা লোভনীয় প্রস্তাব দেয়। প্রাথমিকভাবে কিছু টাকা ফেরতও দেয়, এতে অনেকে আস্থা পায়। কিন্তু পরে হঠাৎ করে অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে কেউই তাদের বিনিয়োগ ফেরত পায়নি।”
আরও একজন ভুক্তভোগী আমিনুল হক বলেন, “আমাদের বলা হয়েছিল এই অ্যাপের মাধ্যমে মিউজিক শুনে বা দেখে ইনকাম করা যাবে। আমরা সেই আশায় টাকা দিই, কিন্তু একদিন হঠাৎ অ্যাপ বন্ধ হয়ে সব শেষ হয়ে গেল।”
একইভাবে স্কুলশিক্ষিকা ফজিলা খাতুন বলেন, “আমি প্রথমে বিনিয়োগ করতে রাজি হইনি। পরে তারা রিটার্নের গ্যারান্টি দিয়ে রাজি করায়। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন করার পরেই অ্যাপ বন্ধ হয়ে যায়।”
স্থানীয়দের দাবি, প্রথম দিকে কিছু বিনিয়োগকারীর মুনাফা ফেরত দিয়ে আস্থা তৈরি করা হয়। পরে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করলে এক পর্যায়ে হঠাৎ করে অর্থ ফেরত বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং অ্যাপটিও অফলাইন হয়ে যায়।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একটি ক্লাসিক পিরামিড বা পোনজী স্কিম, যেখানে পুরনো বিনিয়োগকারীদের মুনাফা দেওয়া হয় নতুনদের টাকায়। নতুন বিনিয়োগ বন্ধ হলেই এই ধরনের প্রতারণা ধরা পড়ে।
বর্তমানে ‘এ.ডি.এ মিউজিক অ্যাপস’-এর কোনো অফিস, ওয়েবসাইট বা সরকারি রেজিস্ট্রেশনের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগের মূল ব্যক্তিকে এখনও এলাকায় অবাধে চলাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে নাইমা সিফাত বন্যার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্বামী মোঃ সিফাত দাবি করেন, “আমি প্রথমে ওই অ্যাপে কাজ শুরু করি। কাউকে প্রলোভন দেখাইনি। কেউ আগ্রহ দেখালে শুধু অ্যাপের পরিচয় দিতাম। অ্যাপ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত।”
স্থানীয়রা দ্রুত প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।