টেকনাফ থানায় ইয়াবা আর এসি নোহা-পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান ঘিরে আবারও বিতর্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্ত এলাকায়। পুলিশের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ ও অসন্তোষ বাড়ছে। বিশেষ করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নূরের বিরুদ্ধে ওঠা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এবং সাম্প্রতিক অভিযানে ইয়াবার একটি বড় অংশ গায়েব হয়ে যাওয়ার গুঞ্জন জনমনে আরও প্রশ্ন তৈরি করেছে।

স্থানীয়দের দাবি, আলোচিত মাদক কারবারি জুবাইরের স্ত্রী ফাইজাকে আদালতে হাজির করার সময় তাকে সাধারণ প্রিজন ভ্যানের বদলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি নোহা গাড়িতে নেওয়া হয়। এর বিনিময়ে তিন লাখ টাকা ঘুষ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার দুপুরে আদালতে নেওয়ার পথে ফাইজাকে পুলিশের গাড়ির সঙ্গে থাকা একটি এসি নোহায় দেখা যায়। অভিযোগকারীদের বক্তব্য, ওসি আবু জায়েদের নির্দেশেই এই বিশেষ গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি আবু জায়েদ জানান, এসব দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি। তা সত্ত্বেও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—একজন মাদক মামলার আসামিকে কেন প্রিজন ভ্যানের পরিবর্তে বিশেষ গাড়িতে পাঠানো হলো?

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার রাতে টানা আট ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে বিজিবি জুবাইরের বাড়ি থেকে ১৯ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা, ১৩০ গ্রাম ইয়াবা পাউডার ও ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করে। অভিযানে ফাইজাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরে অন্যান্য আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে থানায় হস্তান্তর করা হয়। এই ঘটনার পর থেকেই ওসির দায়িত্ব নেওয়ার পর থানার কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা অভিযোগ নতুন করে আলোচনায় আসে।

স্থানীয়দের দাবি, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই কয়েকটি অভিযানে ইয়াবা উদ্ধারের পর সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করা হয়নি বা সেগুলো নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে।

সাম্প্রতিক আরেকটি অভিযানে ইয়াবার সংখ্যাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে নতুন জটিলতা। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি দাবি করেছেন, সেই অভিযানে দুই লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধারের পরও পুলিশের সিজার লিস্টে দেখানো হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার পিস। একটি অডিও ক্লিপে শোনা যায়, স্থানীয় দুজন ব্যবসায়ী বলছেন, “সব ইয়াবা গাড়িতে তোলা হলো, পরে শুধু ৫০ হাজার দেখাল।” যদিও ওসি আবু জায়েদ মো. নূর এই অভিযোগও নাকচ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, “অভিযানে যত ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে, সবই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে এবং পুরো প্রক্রিয়া ভিডিও ধারণ করা হয়েছে।” কিন্তু সেই ভিডিও এখনো প্রকাশ না করায় সন্দেহ আরও গভীর হয়েছে।

এইসব ঘটনা ঘিরে টেকনাফের সীমান্তে আবারও রহস্যের আবরণ তৈরি হয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নাফ নদী হয়ে টেকনাফে ইয়াবা পাচার বহুদিনের বাস্তবতা। প্রতিদিনই কোনো না কোনো চালান ধরা পড়ছে, আবার অনেক চালান রহস্যজনকভাবে অদৃশ্যও হয়ে যাচ্ছে—এমন অভিযোগও কম নয়।

স্থানীয়দের মতে, কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে এই মাদক ব্যবসা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ফলে মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে সত্য-মিথ্যা আলাদা করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।

জনমনে এখন কয়েকটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—অভিযানের ভিডিও ফুটেজ এখনো প্রকাশ করা হলো না কেন? আদালতে নিতে একজন মাদক আসামির জন্য এসি গাড়ির প্রয়োজনীয়তা কী ছিল? থানার ভেতরে কি ঘুষের বিনিময়ে সুবিধা পাচ্ছে কোনো পক্ষ? এসব প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট জবাব এখনো মেলেনি।

টেকনাফের মানুষ বলছেন, সীমান্তের এই এলাকার বাস্তবতা যেন ক্ষমতা, প্রভাব, অর্থ আর মাদকের অদৃশ্য জাল দিয়ে ঘেরা। ধারাবাহিক অভিযোগ আর রহস্যময় ঘটনার মধ্য দিয়ে এখানকার সত্যকে উন্মোচন করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। তবে তদন্ত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া ছাড়া এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলবে না—এটাই স্থানীয়দের প্রত্যাশা।

Share This Article