একদিকে হাওড়, আরেকদিকে পাহাড়। এরকম ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে গঠিত এক ব্যতিক্রম জনপদ নেত্রকোনা। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়েও আলোচনা-সমালোচনায় সরগরম নেত্রকোনার রাজনীতি। প্রকৃতিতে শীতের আমেজ থাকলেও নির্বাচনী এলাকায় এখন বইছে নির্বাচনের গরম হাওয়া।
জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগশূন্য মাঠ দখলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে প্রকাশ্য প্রতিযোগিতা। হারানো আসনগুলো পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। আর তাতে ভাগ বসাতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নতুন দলগুলোর মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণঅধিকার পরিষদও শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা করে যাচ্ছে। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও হয়েছে সক্রিয়।
১০ উপজেলা নিয়ে গঠিত নেত্রকোনা জেলার নির্বাচনী আসন পাঁচটি। সব আসনেই বিএনপির প্রার্থীর সংখ্যা একাধিক। কেউ কাউকে ছাড় না দিয়ে প্রত্যেকে আলাদাভাবে গণসংযোগে ব্যস্ত। এ কারণে মনোনয়ন নিয়ে কোনো কোনো আসনে বেকায়দায় পড়তে পারে দলটি। দু-একটি জায়গায় এনসিপিরও একাধিক প্রার্থী রয়েছে। এক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে ইসলামিক দলগুলো। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত আন্দোলন ইতোমধ্যে পাঁচটি আসনেই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে।
এমন কথাও আলোচনা হচ্ছে যে, অবস্থানগতভাবে বিএনপি এখানে শক্তিশালী হলেও ইসলামিক দলগুলো জোটগতভাবে মনোনয়ন দিলে তাদের প্রার্থীরা কোনো কোনো জায়গায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন। নির্বাচনের মাঠে আরেকটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে আওয়ামীপন্থি ভোটারদের সমর্থন। কাজেই সেদিকেও সচেতন দৃষ্টি রাখছে দলগুলো। যদিও ‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত’ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কেউই এখন আর প্রকাশ্যে নেই। গুরুত্বপূর্ণ সকল নেতাই আত্মগোপনে বা জেলে। আর জাতীয় পার্টি সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়।
নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) ॥ গারো, হাজং, বানাই, কোচ প্রভৃতি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও বাঙালি অধ্যুষিত এই জনপদে নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ আগে থেকেই প্রচার-প্রচারণা চলছে। বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার জনসেবামূলক কাজ করেও মন জয়ের চেষ্টা করছেন। আসনটির রাজনীতি এখন অনেকটাই বিএনপির দখলে। তবে জামায়াতে ইসলামীও দিন দিন সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করছে।
বিএনপি এখানে বরাবরই শক্তিশালী। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে এখানে বিএনপি জয়ী হয়েছিল। এছাড়া বিগত প্রতিটি নির্বাচনেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল দলটি। ত্রয়োদশ নির্বাচনেও আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় তারা। এখানে বিএনপির ভিআইপি প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আগেও একাধিকবার মনোনয়ন পেয়েছেন। সভা-সমাবেশের পাশাপাশি চিকিৎসা ক্যাম্প, চক্ষুশিবির, দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসায় সহায়তা, নিজ খরচে রাস্তাঘাট ও সেতু নির্মাণসহ বেশকিছু জনকল্যাণমূলক কাজ করে তিনি প্রশংসা অর্জন করেছেন।
আসনটিতে বিএনপির অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন- দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. হামিদুর রহমান রাশেদ ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি এজমল হোসেন পাইলট। এখানে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে প্রার্থী করা হয়েছে উপজেলা শাখার আমির অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাসেম। তিনিও সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। সিপিবি থেকে প্রার্থী হতে পারেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. দিবালোক সিংহ। এনসিপির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সংগঠক রফিকুল ইসলাম আইনি ভোটযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে।
এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন থেকে জেলা কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা খাইরুল বাশার ও ইসলামী আন্দোলন থেকে ঢাকা বিভাগীয় কমিটির উপদেষ্টা মাওলানা মামুনুর রশিদ রব্বানীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কলমাকান্দার ৮টি ইউনিয়ন ও দুর্গাপুরের ১টি পৌরসভা এবং ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নেত্রকোনা-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৫২ হাজার ৭শ ৫৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ২২ হাজার ৬শ ৩২ জন।
নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) ॥ জেলা সদরের আসন হওয়ায় নেত্রকোনার রাজনীতিতে এ আসনটির গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ এখান থেকেই সারা জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিএনপি এখানে বরাবরই শক্তিশালী। ইতোপূর্বে একাধিকার এখানে বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। তাছাড়া অতীতের সব নির্বাচনেই বিএনপির অবস্থান ছিল মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। সম্প্রতি জেলা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলটি আরও চাঙা হয়েছে।
ওদিকে জামায়াতে ইসলামীও আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন বেশি শক্তিশালী এবং সক্রিয়। নিয়মিত সভা-সমাবেশ-মিছিলের মধ্য দিয়ে তারা তাদের শক্তির জানান দিচ্ছে। অন্য দলগুলোর মধ্যে এনসিপি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও গণঅধিকার পরিষদসহ ছোটখাটো দলগুলোও নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
আসনটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক। তাদের মধ্যে রয়েছেন- জেলা বিএনপির একাধিকবারের সাবেক সভাপতি, সাবেক এমপি, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ উদ্দিন খান এবং জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি, সাবেক আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট অর্থোপেডিক চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল হক। সজ্জন প্রার্থী হিসেবে পরিচিত দুজনই একাধিকবার বিএনপির মনোনয়নে ভোটযুদ্ধ করেছেন।
এছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন পেতে সক্রিয় রয়েছেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এটিএম আব্দুল বারী ড্যানী, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আরিফা জেসমিন নাহীন, ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট মো. খোরশেদ মিয়া আলম ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ডা. দেলোয়ার হোসেন টিটো। মনোনয়নের প্রশ্নে আপাতত কেউ কাউকে ছাড় দিতে চাচ্ছেন না।
জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে জোর প্রচার চালাচ্ছেন সাবেক জেলা আমির অধ্যাপক মাওলানা এনামুল হক। তারুণ্যের দল এনসিপির প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) প্রীতম সোহাগ ও কেন্দ্রীয় সদস্য ফাহিম রহমান খান পাঠান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে জনপ্রিয় আলেম মাওলানা আব্দুল কাইয়ুমকে। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের একক প্রার্থী হিসেবে সক্রিয় আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী মোহাম্মদ আব্দুর রহিম রুহী। গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী হবেন কেন্দ্রের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন।
সদর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন এবং বারহাট্টা উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯৮ হাজার ১শ ৩৬। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৪৭ হাজার ৯শ ৫৬ জন।
নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) ॥ আসনটির রাজনীতিতে এতদিন বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ উভয়ই শক্তিশালী অবস্থানে ছিল। ইতোপূর্বের নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ যেমন জয় পেয়েছে, তেমনি বিএনপিও একাধিকবার জয় পেয়েছে। তবে জুলাই পরবর্তী প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগশূন্য মাঠে বিএনপি এখন বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে। আবার এ সুযোগে জামায়াতে ইসলামীও তাদের কর্মী-সমর্থকদের সংখ্যা বাড়াতে সচেষ্ট হয়েছে। অন্যান্য আসনের মতো এখানেও বিএনপির প্রার্থীর সংখ্যা একাধিক, কেউ কেউ আবার ‘অতিথি পাখি’।
তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক (সাবেক সদস্য সচিব) রফিকুল ইসলাম হিলালী এবং জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন ভুঁইয়া দুলাল। সাবেক ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলাম হিলালী আগেও একাধিকবার বিএনপির টিকিটে এমপি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। আর দেলোয়ার হোসেন ভুঁইয়া দুলাল ইতোপূর্বে কেন্দুয়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। দুজনই গ্রহণযোগ্য প্রার্থী। এলাকাটির বেশিরভাগ নেতাকর্মীই এখন এই দুই নেতাকে নিয়ে প্রকাশ্যে বিভক্ত।
বিএনপির আরও মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন- দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ী নেতা সৈয়দ আলমগীর খসরু, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা-ই-জামান সেলিম, মেজর (অব.) সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক, জিয়া পরিষদের সহকারী মহাসচিব রোটারিয়ান এম নাজমুল হাসান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহ-ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রায়হান আমিন তালুকদার রনি এবং কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ডিজেডএম হাসান বিন শফিক সোহাগ।
জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন জেলা কমিটির শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক খায়রুল কবির নিয়োগী। এছাড়া খেলাফত আন্দোলন থেকে আটপাড়া উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মাদ শামছুল ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে জাকির হোসেন সুলতানকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দুয়ার একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন এবং আটপাড়ার সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নেত্রকোনা-৩ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৮ হাজার ৭শ। এর মধ্যে নারী ২ লাখ ৪ হাজার ৬শ ২৬ জন।
নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) ॥ জেলার হাওড়াঞ্চলের তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটির রাজনীতি এখন একচ্ছত্রভাবে বিএনপির দখলে। আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল মমিনের এই ভোটদুর্গে হানা দিয়ে এক সময় একক অধিপতি হয়ে উঠেছিলেন বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক, স্থানীয় উন্নয়ন ও বহু বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে ভোটারদের মন জয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে গ্রেপ্তারের পর আসনটি আবার আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। রাজনীতিতে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন বাবর।
পরবর্তীতে মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং আরেকবার তার স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণী বিএনপির টিকিটে প্রার্থী হলেও ভাগ্যের শিকে ধরা দেয়নি। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী প্রেক্ষাপটে কারামুক্ত হয়ে আবারও সদর্পে ফিরেছেন লুৎফুজ্জামান বাবর। দলের নেতাকর্মীরাও আশাবাদী তাকে নিয়ে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
বাবর ছাড়াও এখানে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশা করে গণসংযোগ করছেন- দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কৃষিবিদ চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল ফারুক এবং সাবেক কর কমিশনার কাজী ইমদাদুল হক। জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদক আল হেলাল তালুকদার। এনসিপি থেকে প্রার্থী হতে পারেন মোহনগঞ্জ উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম শুভ। তারুণ্যনির্ভর দলটির স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি বেশ সক্রিয়।
এছাড়া খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন মদন উপজেলা আহ্বায়ক মাওলানা আব্দুল মান্নান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে হাফেজ মাওলানা মুখলেছুর রহমানকে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে প্রার্থী হতে পারেন কেন্দ্রের প্রেসিডিয়াম সদস্য জলি তালুকদার। মদন উপজেলার একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন, মোহনগঞ্জ উপজেলার একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়ন এবং খালিয়াজুরী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নেত্রকোনা-৪ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৭২ হাজার ১শ ৯৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫শ ২৮ জন।
নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) ॥ অন্যান্য আসনের মতো নেত্রকোনা-৫ আসনেও বিএনপিরই শক্ত অবস্থান, যদিও নেতৃত্বের গ্রুপিং প্রকটভাবে দৃশ্যমান। ওদিকে জামায়েতে ইসলামীর নেতাকর্মীরাও বসে নেই। দলীয় প্রার্থীর অনুকূলে দাঁড়িপাল্লার ওজন ভারি করতে তারাও ব্যাপক তৎপর। এখানে বিএনপির ভোটারদের পরিচিত নাম আবু তাহের তালুকদার। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, পূর্বধলা উপজেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক এবং নেত্রকোনা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি। এর আগেও ধানের শীষ নিয়ে লড়েছেন তিনি। তিনি অনেক আগে থেকেই আছেন মাঠে।
বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি এএসএম শহীদুল্লাহ ইমরান। তার প্রচার-প্রচারণাও জোরালো। এছাড়াও বিএনপির মনোনয়নের জন্য গণসংযোগ করে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ খান, পূর্বধলা উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক বাবুল আলম তালুকদার ও ইঞ্জিনিয়ার মাহাবুবুল আলম রানা। জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন জেলা কমিটির সহকারী সেক্রেটারি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুম মোস্তফা। জামায়াত তাকে নিয়ে ব্যাপক আশাবাদী।
এদিকে খেলাফত আন্দোলন থেকে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় সদস্য মুফতি হাবিবুল্লাহ খান। এনসিপি থেকে উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী আনোয়ার হোসেন কাজল মনোনয়ন চাইতে পারেন। পূর্বধলা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নেত্রকোনা-৫ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৮ হাজার ২শ ৩৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৪১ হাজার ২শ ৪২ জন।