হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী শ্যামাপূজা ও দীপাবলি আজ সোমবার (২০ অক্টোবর)। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে অনুষ্ঠিত এই পূজায় ভক্তরা দেবী কালী বা শ্যামার আহ্বান করেন। যিনি অশুভ শক্তি দমন করে শুভ শক্তির উদ্ভাস ঘটান।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, দুষ্টের বিনাশ ও শিষ্টের রক্ষার জন্য পৃথিবীতে আগমন ঘটে দেবী কালীর। সাধারণত দিনের বেলায় অধিকাংশ দেব-দেবীর পূজা হলেও, কালীপূজা হয় গভীর রাতে। এ রাতেই অনুষ্ঠিত হয় তন্ত্র মতে শক্তির আরাধনা, সঙ্গে থাকে অঞ্জলি প্রদান, আরতি, প্রসাদ বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোয় উদ্ভাসিত দীপাবলি।
শ্যামাপূজার সন্ধ্যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে ও মন্দিরে জ্বলে ওঠে সহস্র প্রদীপ। মৃত স্বজনদের আত্মার শান্তি কামনায় প্রদীপ জ্বালিয়ে অনেকেই তা ভাসিয়ে দেন নদী বা পুকুরে। এটি শুধু ধর্মীয় আচার নয়, হয়ে ওঠে এক অভাবনীয় নান্দনিকতা ও স্মৃতিচারণার উপলক্ষ।
ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে শ্যামাপূজার আয়োজন করেছে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে সন্ধ্যা ৬টায় সহস্র দীপ জ্বালিয়ে শুরু হবে দীপাবলি উৎসব, পরে অনুষ্ঠিত হবে মূল পূজা।
এ উপলক্ষে এক শুভেচ্ছা বার্তায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর এবং সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, পাশাপাশি মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব ও সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পাল দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তারা বলেন, ‘দেবী শ্যামা শান্তি, সংহতি ও সম্প্রীতির প্রতীক। তার আরাধনায় অশুভ শক্তি বিনাশ ও কল্যাণের পথে অগ্রসর হওয়ার প্রেরণা পাওয়া যায়।’
কালী দেবীকে শক্তির উৎস ও সংহারের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পুরাণ মতে, শুম্ভ-নিশুম্ভ দানব বধের সময় তার শরীর থেকে নির্গত এক বিশেষ রশ্মির কারণে তার রঙ হয় কৃষ্ণবর্ণ, আর সেই থেকে নাম হয় ‘কালী’। এই দেবীকে ভক্তরা ‘শ্যামা’, ‘আদ্যশক্তি’, ‘চামুণ্ডা’, ‘ভদ্রকালী’, ‘মহামায়া’সহ বিভিন্ন নামে ডাকেন।
পূজার রাতে অনেকেই শ্মশানেও প্রদীপ জ্বালিয়ে পিতৃপূজা করেন। এই প্রদীপ প্রজ্বালনের উৎসবই ‘দীপাবলি’ নামে পরিচিত- যার অর্থই হলো ‘আলোর উৎসব’। এটি অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর জয়, অশুভের বিরুদ্ধে শুভ শক্তির প্রতীক।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়- বিশেষ করে পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, সূত্রাপুর, লালবাগ, পোস্তগোলা ও ঠাটারীবাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বড় পরিসরে শ্যামাপূজার আয়োজন হয়েছে। পাশাপাশি গোপীবাগ রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ, রমনা কালীমন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রমেও হবে বিশেষ পূজা ও অনুষ্ঠানমালা।
দুর্গাপূজার মতোই অনেক পরিবার বা মণ্ডপে মৃণ্ময়ী কালীপ্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হয়। তান্ত্রিক বা ব্রাহ্মণ পদ্ধতিতে রাতভর চলে আরাধনা। কোথাও কোথাও পালন করা হয় বলিরীতিও।
শ্যামাপূজা এবং দীপাবলি শুধুই ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি অন্ধকারে আলো জ্বালানোর প্রতীক, অশান্তির বিপরীতে শান্তির পথ দেখানোর অনুপ্রেরণা।