জুম বাংলাদেশের উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল মানুষের মাঝে সাহরি-ইফতার সামগ্রী বিতরণ

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক ::

প্রথম রমজান থেকে প্রতিদিন সাহরি ও ইফতার নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন এক ঝাঁক তরুণ।
উদ্দেশ্য- যাদের সামর্থ্য নেই তাদেরকে মানসম্মত সাহরি ও ইফতার করানো। রমজানে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক মেহমান থাকেন তাদের এই আয়োজনে। তবে এ মহতী উদ্যোগ নিয়ে সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাঁড়িয়েছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন-জুম বাংলাদেশ।

সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্তে সারিবদ্ধভাবে রিকশাচালক ও সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের দেখা মেলে ঢাকার সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সামনে। প্রতিদিন রাস্তার পাশে ছিন্নমূল, দিনমজুর ও রিকশাচালকসহ ৫ শতাধিক রোজাদার ব্যক্তির সাহরি ও ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিদিন দুপুর থেকে শুরু করে সাহরির সময় পর্যন্ত সেচ্ছাসেবকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সাহরি ও ইফতারের আয়োজন করে থাকে সংগঠনটি।

সংগঠনটির এক ঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবীর সহায়তায় চলছে এই কর্মযজ্ঞ। সাহরি ও ইফতারের এই কর্মকাণ্ড সবার সামনে তুলে ধরতে জুম বাংলাদেশ সেগুনবাগিচায় একটি অস্থায়ী লাইভ কিচেন স্থাপন করেছে; এর মাধ্যমে সরাসরি তাদের কর্মকাণ্ড দেখা যায়।

জুম বাংলাদেশের কার্যক্রম সম্পর্কে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এসটি শাহীন প্রধান জানান, ইসলামিক সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত একটি মাস হলো রমজান মাস। নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল ভাসমান রোজাদারদের যেন রোজা রাখতে কষ্ট না হয়, সে জন্য জুম বাংলাদেশ প্রতিদিন সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির সামনে সাহরি ও ইফতার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন ৫০০ মানুষের রান্নার কার্যক্রম পরিচালনা করতে আমাদের ভীষণ কষ্ট করতে হয়, তারপরও এই রমজানে আমরা প্রতিদিন ইফতার ও সাহরির কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই। তাদের এই কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সাহরি-ইফতারে সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে জুম বাংলাদেশ
স্বেচ্ছাসেবী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘অসহায় ভাসমান রোজাদারদের মধ্যে সাহরি ও ইফতার বিতরণের জন্য আমাদের কর্মকান্ড অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে সম্পাদন করা হয়। এতে আমাদের কোনো ক্লান্তি আসে না। বরং খুব ভালো লাগে। আমাদের কষ্ট তখনই সার্থক হয় যখন আমাদের চোখের সামনে এতগুলো মানুষ একসঙ্গে সাহরি ও ইফতার সম্পাদন করে। নিজের হাতে সাহরি ও ইফতার দিতে পেরে এতটা তৃপ্তি লাগে যা মুখে বলার মতো নয়। আমাদের এই কর্মকাণ্ডে সমাজের বিত্তবানরা যদি আরো এগিয়ে আসে, তাহলে আমরা নিরবিচ্ছিন্নভাবে আমাদের এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারবো।

জুম বাংলাদেশের এই মেহমানখানায় রাত ৩টায় কর্মকাণ্ড করতে আসা একজনকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘প্রথম রমজান থেকে এখানে কর্মকাণ্ড করছি। এবার রমজানে আমাগো লাইগা আল্লার রহমত পড়ছে, অন্য বছরের রমজানে আমাগো না খাইয়া রোজা রাখতে হইতো, এবার জুম বাংলাদেশ আমাদের নিয়মিত সাহরি ও ইফতার দিচ্ছে, আমাগো আর কোনো চিন্তা নাই। আল্লাহ ওনাগো বাঁচায়া রাখুক।’ অন্য একজন গরুর গোস্ত দিয়ে সাহরি করতে পেরে খুবই খুশি। তিনি বলেন, ‘গরুর গোস্ত খাইতে ইচ্ছা করতেছিল মেলা দিন ধইরা। কিন্তু ভাই, আমাগো মতো গরিব মানুষের গোস্ত খাওয়ার সুযোগ কি কখনো হয়। জুম বাংলাদেশের কল্যাণে আল্লাহর রহমতে গরুর গোস্ত দিয়া সেহরি করার সুযোগ হইছে।’

জুম বাংলাদেশের সাথে সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবীরা বলেন, মানুষের জন্য কাজ করতে পারাটা একটা সৌভাগ্যের ব্যাপার, সবার ভাগ্যে এটা জোটে না। শুভাকাঙ্খীদের সহায়তায় রমজানে প্রতিটি মানুষ যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ সাহরি খেয়ে তাদের সিয়াম পালন করতে পারেন সে জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করি।

উল্লেখ্য, জুম বাংলা ইয়ুথ ফাউন্ডেশন ২০১৬ সাল থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও ছিন্নমূল শিশুদের শিক্ষা প্রদানের কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি হতদরিদ্র, অসহায় ও বস্তিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

Share This Article