‘আমার ভাগনে রে মারতাছিল মোবাইল চুরির কথা কইয়া, সে মোবাইল চুরি করে নাই, তাও মাফ চাইছে, হাতে-পায়ে ধরছে কিন্তু ছাড়ে নাই। আমি ছাড়াতে গেছি, আমারেও মারছে, জামা-কাপড় ছেঁড়া ফেলেছে। কেউ ভয়ে থামাতে পারে নাই। কিছু না করেও আমরা এরকম মার খাইলাম, বেলচা দিয়ে পিটাইছে, কিল-ঘুসি দিয়েছে, আমি বিচার চাই’, এভাবেই মারধরের বিবরণ দিয়েছেন আখির আলী।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে ঢাকার ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া এলাকায় মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্ববিরোধের জেরে এক তরুণ ও তার মামাকে মারধর করেন গাংগুটিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ইমান আলী ও তার ছেলে। ওই মারধরের ঘটনায় এলাকায় ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য। ইউপি সদস্য ও তার ছেলের বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
মারধরের শিকার ব্যক্তিরা হলেন—গাংগুটিয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুরা এলাকার আমান উল্লাহ (২২) ও তার মামা একই এলাকার আখির আলী (৩৯)। আখির আলী বারবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার আখির মার্কেটের মালিক।
অভিযুক্তরা হলেন—গাংগুটিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ইমান আলী (৫০) ও তার ছেলে ইসমাইল (২৪)। তারা কৃষ্ণপুরা এলাকার বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানান, গত ৭-৮ দিন আগে রাতে ইউপি সদস্যের ভাড়া বাড়িতে রঙের কাজ করতে যান আমান উল্লাহ। সেখানে এক ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কথার একপর্যায়ে তার বাড়িতে পেঁপে গাছ ও পেঁপে আছে বলে জানান। সেই ভাড়াটিয়া পেঁপে চাইলে তিনি বাড়িতে পেঁপে আনতে যান। এ সময় রাত হওয়ায় তিনি তার একটি বাটন মোবাইল ফোন দিয়ে দেন লাইট হিসেবে ব্যবহারের জন্য। তবে পেঁপে নিয়ে তার ফিরতে দেরি হলে ওই ভাড়াটিয়া তার মামাকে বিষয়টি জানান। এর মধ্যে আমান পেঁপে ও ফোন নিয়ে ফিরে আসেন। তবে দেরি হওয়ায় ফোন চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে আটকে চড়-থাপ্পড় দেন ভাড়াটিয়া। এরপর বাড়িওয়ালা ইউপি সদস্য ও তার মামা সেখানে গেলে তাকে ওই ভাড়াটিয়ারা ছেড়ে দেন।
এ ঘটনার একাধিক ভিডিও ফুটেজ এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। এর একটিতে আমানকে টেনে নিয়ে যেতে দেখা যায়। অপরটিতে আমানকে মাফ চাইতে দেখা যায়। আরেকটিতে দেখা যায় মেম্বার ও তার ছেলে মামা-ভাগনেকে মারধর করছেন।
ভুক্তভোগী আখির আলী বলেন, আমার ভাগনে আমান কাজের জন্য ইমান আলীর বাড়ি গিয়েছিল। তখন ওই বাড়ির ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথা হয়। সে জানায় তার বাড়িতে পেঁপে গাছ আছে, পেঁপে আছে। তখন তারা পেঁপে চায়। আমান বাড়ি যাবে, তাই লাইটের জন্য ওদের একটা ফোন তাকে দেয়। পেঁপে নিয়ে ফিরতে দেরি হলে ওই ভাড়াটিয়ারা আমাকে বলে আমার ভাগনে ফোন নিয়ে গেছে। এর মধ্যেই ভাগনে ফোন, পেঁপে নিয়ে ওই বাড়ি ফিরে যায়। ফিরলে তারা আমার আটকে সেই সময় মারধর করে। তখন আমি সেখানে যাই। ইমান আলী আমার ভাগনেকে আমাকে দিয়ে দেয়। যারা মারছিল এর মধ্যে একজনকে (ইমান আলীর ভাড়াটিয়া) আজকে আমার মার্কেটে দেখে ভাগনে। তাকে একটা চড় দেয়। সেই ছেলে ইমান আলীকে জানায়। তখন ইমান আলী এসে তাকে মারধর করে। ভাগনে ভয়ে একটা ঘরে লুকায়, সেখান থেকে টেনে বের করে এলোপাতাড়ি পেটায় বেলচা দিয়ে। আমি থামাতে গেলে আমাকেও লাথি, কিল-ঘুসি দেন ইমান আলী ও তার ছেলে ইসমাইল। এতে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়। তার ভাগনের শরীরও জখম হয়। পরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য ইমান আলী মারধরের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আখির ভাগনে মোবাইল চুরি করেছিল। তাকে আটকানো হয়েছিল। আমি মাফ করে দিয়েছি। আজকে আমার ভাড়াটিয়া বাজার করে ফেরার সময় তাকে ধরে চড় দিয়েছে। আমি বিচার করেছি। ধরে কয়টা দিতে গেছি, তখন আখির আসছে। তাই আরকি। বেলচা তো পরে নিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় কোনও অভিযোগ পাইনি। পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।