যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা কার্যকর করার দাবি গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্যরা এক বিবৃতিতে সংবাদমাধ্যমকর্মী স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের আত্মহত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, দোষীদের বিচার  এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা কার্যকর করার দাবি জানান। রবিবার (১৯ অক্টোবর) অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘ঢাকা স্ট্রিম’ এর গ্রাফিক ডিজাইনার স্বর্ণময়ী বিশ্বাস তার নিজ বাসায় ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অকালে আত্মহত্যার ঘটনায় আমরা ব্যথিত, শোকাহত। তার এই মৃত্যু আমাদের আর একবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল নারীর জন্য তার কর্মপরিবেশ কতখানি নিরাপত্তাহীন, নির্মম মানসিক নিপীড়নে আক্রমণাত্মক।’

বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সূত্রে জানতে পেরেছি স্বর্ণময়ী ও তার সহকর্মীরা মিলে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিষ্ঠানটির বাংলা বিভাগের প্রধান আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন। কিন্তু ‘ঢাকা স্ট্রিম’ কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ আমলে নিয়ে যথাযথ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সহকর্মীদের ভাষ্যমতে এ ঘটনায় স্বর্ণময়ী বিশ্বাস মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন।’

‘আমরা মনে করি, যৌন নিপীড়ন পরবর্তী ভিক্টিমের মানসিক ও শারীরিক অবস্থা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হয় না। যৌন নিপীড়ন পরবর্তী সকল ঘটনাকে আইনের চোখে নিপীড়নকারী দায়ী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আলোচ্য ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এখানে আলতাফ শাহনেওয়াজের পাশাপাশি একই ভাবে ঢাকা স্ট্রিমের প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক গোলাম ইফতেখার মাহমুদ এবং তদন্তকারীরাও একই অপরাধে অভিযুক্ত হবেন’।

‘আমরা জানি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে ২০০৯ সালে হাইকোর্ট একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। সে অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালার ভিত্তিতে সেল গঠন করে এ ধরনের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার কথা। অথচ আমরা দেখলাম বাংলাদেশের প্রায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের মতই ‘ঢাকা স্ট্রিম’ও হাইকোর্টের এই নীতিমালা অনুসরণ করেনি। উপরন্তু দায় এড়িয়ে অভিযুক্তকে বহাল রেখে এ ধরনের ঘটনাকে বৈধতা দিয়েছে। আমরা ঢাকা স্ট্রীম নিউজ পোর্টাল কর্তৃপক্ষের এ ভূমিকার নিন্দা জানাই। যেকোনো মর্যাদাসম্পন্ন মানুষের জন্য এ ধরনের পরিবেশে কাজ করা অত্যন্ত দুরূহ। ফলে নারীদের কর্মক্ষেত্র থেকে ঝরে পড়া, কাজের প্রেরণা কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ ঘটনাগুলো প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে বলে আমরা মনে করি। স্বর্ণময়ীর মৃত্যু এদেশের সকল নারীর কর্মক্ষেত্রের প্রতিবন্ধকতাকে উন্মোচিত করেছে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের দায় ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের দায়িত্ব। আমরা সুস্পষ্টভাবে দাবি জানাচ্ছি স্বর্ণময়ীর মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে, এর পেছনে দায়দায়িত্ব উন্মোচন করতে হবে এবং যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তদন্ত করে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। একইসাথে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা বাস্তবায়নে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’

Share This Article