লিবিয়া থেকে সকালে ফিরবেন ৩১০ বাংলাদেশি 

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

স্বেচ্ছায় দেশে প্রত্যাবর্তনে আগ্রহী মোট ৩১০ জন বিপদগ্রস্ত বাংলাদেশিকে বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বাংলাদেশ দূতাবাস, লিবিয়ার তত্ত্বাবধানে এবং লিবিয়ার জাতীয় ঐকমত্যের সরকারের সার্বিক সহযোগিতা ও ব্যবস্থাপনায় রওনা দেন। শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) সকাল ৮টায় তারা ঢাকায় এসে পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। 

প্রত্যাবাসিতদের মধ্যে মিসরাতা থেকে ২১১ জন এবং ত্রিপলী থেকে ৯৯ জন অভিবাসী ছিলেন বলে জানিয়েছে ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস। 

দূতাবাস জানায়, লিবিয়া সরকারের সহযোগিতা ও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে মিসরাতা থেকে প্রত্যাবাসিত অভিবাসীদের ২৯ অক্টোবর ত্রিপলীর সরকারী অভ্যর্থনা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সবধরনের সহায়তা দেওয়া হয়। প্রত্যাবাসিত অভিবাসীরা শুক্রবার ফ্লাই ওইয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এটি লিবিয়া সরকারের সহযোগিতায় পরিচালিত তৃতীয় বিশেষ চার্টার ফ্লাইট।

লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার ত্রিপলীর অভ্যর্থনা কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে প্রত্যাবাসিত অভিবাসীদের বিদায় জানান। এ সময় দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মো. রাসেল মিয়া এবং অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রদূত অভিবাসীদের উদ্দেশে বলেন, “লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা, অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় বাংলাদেশ দূতাবাস নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিপদগ্রস্ত ও অনিয়মিত অবস্থায় থাকা অভিবাসীদের মধ্য থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুকদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে দূতাবাস সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও সহানুভূতির সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।”

রাষ্ট্রদূত বলেন, স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তনে আগ্রহী অভিবাসীদের দেশে পাঠানোর কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে দূতাবাস প্রথমবারের মতো লিবিয়া সরকারের সহযোগিতায় তিনটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ৯ অক্টোবর প্রথম ফ্লাইটে ৩০৯ জন, ২৩ অক্টোবর দ্বিতীয় ফ্লাইটে আরও ৩০৯ জন, এবং ৩০ অক্টোবর তৃতীয় ফ্লাইটে ৩১০ জনসহ মোট ৯২৮ জন বিপদগ্রস্ত বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে। দূতাবাসের সক্রিয় উদ্যোগের ফলে এই অভিবাসীদের জেল ও জরিমানা মওকুফ করে নিরাপদে দেশে পাঠানো সম্ভব হয়েছে।

রাষ্ট্রদূত অভিবাসীদের উদ্দেশে বিশেষ বার্তায় বলেন, “দেশে ফিরে নতুনভাবে জীবন শুরু করুন, পরিবারের পাশে থাকুন এবং স্থানীয় পর্যায়ে মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরিতে ভূমিকা রাখুন।” 

তিনি আরও বলেন, “নিরাপদ অভিবাসনই টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি। তাই ভবিষ্যতে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে বৈধ উপায়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের চেষ্টা করা উচিত।”

এছাড়াও অভিবাসীদের দেশে ফিরে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার। 

বিদায়কালে রাষ্ট্রদূত লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। এসময় তিনি লিবিয়ার জাতীয় ঐকমত্যের সরকার বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মিসরাতা ও ত্রিপলীর স্থানীয় প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সহযোগিতার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বলেন, “বাংলাদেশ দূতাবাস ও লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘনিষ্ঠ সমন্বয়, পারস্পরিক আস্থা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার কারণেই এই মানবিক প্রত্যাবাসন কার্যক্রম সফলভাবে শেষ হয়েছে।” 
রাষ্ট্রদূত ভবিষ্যতেও বিপদগ্রস্ত অবস্থায় থাকা এবং স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনে লিবিয়া সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন। 

উল্লেখ্য, লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৭ হাজার ১৭১ জন বাংলাদেশিকে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে দেশে প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা করেছে।

 

Share This Article