বাংলাদেশ এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার রিসার্চ কাউন্সিলের (বিইপিআরসি) ভবিষ্যৎ ভালো বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিইপিআরসিকে একটা ট্র্যাকে তুলতে সক্ষম হয়েছি। এখন মানসম্মত গবেষণা প্রস্তাব পাচ্ছি। প্রস্তাব নিয়ে আর চিন্তা করতে হয় না। এই প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ ভালো মানে এই সেক্টর ও দেশের জন্য ভালো।’
বিইপিআরসি’র দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার রাজধানীর রমনায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বিইপিআরসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক ব্যবস্থাপনা গবেষণাবান্ধব নয়। যে কারণে গত দশ বছরে যা করা হয়েছে, আরও কাজ করা সুযোগ ছিল। আগের দুই বছরে কোন গবেষণা প্রস্তাব স্বাক্ষর করা হয়নি। গত ১ বছরে ৪টি চুক্তি করেছি, আরও দুটি চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত যে কোন দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার দেখে মূল্যায়ন করা হয় কোন দেশের অবস্থান। ভারতের মহারাষ্ট্রে মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার ৩ হাজার কিলোওয়াট আওয়ারের (ইউনিট) বেশি, তাদের সবচেয়ে কম ব্যবহার পশ্চিমবঙ্গে ৩৪৮ কিলোওয়াট আওয়ার। বাংলাদেশে মাত্র ৬৪০ কিলোওয়াট আওয়ার। ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ ব্যবহার করা মালয়েশিয়া কতটা উন্নত আমরা সকলেই জানি। আমাদের উন্নয়নের জন্য বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
‘অন্যান্য দেশে বিদ্যুতের স্থাপিত সক্ষমতার পরিমাণ চাহিদার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। আর আমরা দ্বিগুণ উৎপাদন সক্ষমতা নিয়ে বসে আছি। বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি দেখানোর জন্য একটার পর একটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হয়েছে। ক্যাপটিভে ৪ হাজার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, উৎপাদন ক্ষমতা ৬ হাজার মেগাওয়াট। এটা নিয়ে নিশ্চিতে ঘুমিয়ে থাকার সময় নেই। ৫ বছর, ১০ বছর পরে অবস্থা কি দাঁড়াবে। বিইপিআরসি এনার্জি সেক্টরের মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে কাজ করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে গার্মেন্টস সেক্টরকে নেট জিরোতে যাওয়ার চাপ রয়েছে পোশাক ক্রেতাদের। সেটা কিভাবে সম্ভব, তখন বিদ্যুতের চাহিদা কত দাঁড়াবে। সেগুলো বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন রয়েছে’ যোগ করেন তিনি।
জালাল আহমেদ বলেন, বিইআরসির গবেষণা তহবিল রয়েছে। এতোদিন নীতিমালা অভাবে বিনিয়োগ করা হয়নি। নীতিমালা হয়ে গেছে, এখন বিনিয়োগ শুরু করা হবে।
অনুষ্ঠানে বিইপিআরসির সদস্য (ইনোভেশন) ড. মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশ বিদেশের বিভিন্ন খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের মাধ্যমে ১৭টি গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে ১১টি সমাপ্ত হয়েছে, ৬টি চলমান রয়েছে। গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক থ্রি হুইলারের স্ট্যান্ডার্ড মডেল প্রস্তুত, বর্জ্য থেকে বায়োকোল উৎপাদন, কম গতি সম্পন্ন বায়ু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সাশ্রয়ী সিনক্রোফেজর ডিভাইস, প্রায়োরিটি লোড ম্যানেজমেন্ট ভিত্তিক এনার্জি মিটার, সাবস্টেশন মনিটরিংয়ের জন্য ওয়েব ও অ্যাপ ভিত্তিক সিস্টেম উদ্ভাবন প্রকল্পে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৪ কোটি টাকা। আর সম্পাদিত ১১টি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, গত অর্থবছরে দেশের মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ৮৪ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে আমদানি ব্যয় হয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন জ্বালানি তেল আমদানি করেছে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার, এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জ্বালানিখাত এখন অনেকটা আমদানি নির্ভর। দিন দিন আমদানি নির্ভরতা বাড়ছে। দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ প্রাথমিক জ্বালানি আমদানি করতে হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ৫ বছর পর জ্বালানি আমদানির পরিমাণ ৯০ শতাংশ হয়ে যেতে পারে। যে কারণে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে। আমদানি কমাতে হলে গবেষণার বিকল্প নেই। যদিও আমাদের গবেষণা অনেক অবহেলিত। এতোদিন ইনোভেশন ধাপে সহায়তা দিয়েছি, এখন ইনকিউবেশন এবং শিল্পায়নের দিকে যাওয়া যাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল এস এম জিয়া-উল-আজিম।
প্রসঙ্গত দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে গবেষণার জন্য প্রাথমিকভাবে ৪ কোটি টাকা পর্যন্ত তহবিল দেওয়া হচ্ছে। বিইপিআরসি’র ওয়েবসাইটে গিয়ে যে কেউ তার আইডিয়া জমা দিতে পারবেন যেকোনও সময়। যাচাই-বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হলে গবেষণা কাজের জন্য নির্ধারিত অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অন্যান্য সহযোগিতাও করছে বিইপিআরসি।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতে গবেষণার মাধ্যমে এ খাতে আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং প্রসারের লক্ষ্যে ২০১৫ সালে বিইপিআরসি’র যাত্রা শুরু হয়। তাদের মূল দায়িত্ব ও কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে- বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে গবেষণার মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন, বিদ্যমান প্রযুক্তির উন্নয়ন ও উৎকর্ষতা সাধন; নবায়নযোগ্য জ্বালানির সাশ্রয়ী ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া; আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষক ও বিজ্ঞানীদের গবেষণায় সম্পৃক্ত করা।