নিক্সনের টাকায় নাশকতার ছক, আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ডাকা ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিকে সফল করার জন্য ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা মো. ফারুক হোসেনকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

পুলিশ সুপার জানান, ২০২১ সাল থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. ফারুক হোসেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের অনুপস্থিতিতে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি (ফারুক হোসেন) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী ফারুককে যে পাঁচ লাখ টাকা দেন, তার মধ্যে থেকে চার লাখ টাকা মো. ফারুক হোসেন ইতিমধ্যে একজন ব্যক্তিকে প্রদান করেছেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময়ে দলীয় প্রোগ্রাম করার জন্য বিকাশে তার দলীয় লোকজনকে অর্থ প্রেরণ করেন।

‘ফারুক যে লোককে চার লাখ টাকা দিয়েছেন, তার নাম পুলিশ জানতে পেরেছে’— এই তথ্য জানিয়ে তদন্তের স্বার্থে ওই ব্যক্তির নাম প্রকাশ থেকে বিরত থাকেন পুলিশ সুপার।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আগামী ১৩ নভেম্বর ঢাকা লকডাউন কর্মসূচিকে সফল করা এবং সারা বাংলাদেশকে অচল করার লক্ষ্যে গত ৯ নভেম্বর (রোববার) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শহরের ব্রহ্ম সমাজ সড়কে একত্রিত হয় আওয়ামী যুব মহিলা লীগের কর্মীরা এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। দেশের অভ্যন্তরে অরাজকতা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, সরকারের বিপক্ষে নানা ধরনের উসকানিমূলক স্লোগান দেওয়ার জন্য একত্রিত হয়ে বর্তমান সরকারকে উৎখাত, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি, জননিরাপত্তা বিপন্ন করা, জনমনে ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টির ষড়যন্ত্র ও প্রচেষ্টা করে।

পুলিশ সুপার বলেন, এ ষড়যন্ত্রের মূল পরিকল্পনাকারী এবং অর্থ যোগানদাতা হলেন মো. ফারুক হোসেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে কোতোয়ালি থানা পুলিশ গতকাল সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শহরের ঝিলটুলী মহল্লার নূরজাহান টাওয়ারের ১০ তলায় অভিযান চালিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. ফারুক হোসেন (৫৩) ও জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাসরিন আক্তারকে (২৮) গ্রেপ্তার করে।

ফারুক হোসেন শহরের হাবেলী গোপালপুর এলাকার বিন্দুবাড়ি সড়কের মৃত জাহেদ হোসেনের ছেলে। নাসরিন আক্তার কুঠিবাড়ী রেলকলোনি এলাকার মৃত ফিরোজ শেখের মেয়ে।

পুলিশ সুপার বলেন, ফারুক হোসেনের মোবাইল ফোন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঢাকা লকডাউনকে সফল করার জন্য তিনি বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করেছেন।

লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেনের ছাত্রজীবন থেকে তার কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন মো. ফারুক হোসেন ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৮১ সালে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ভিপি ছিলেন। ১৯৮২ সালে তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে সভাপতি হন। এরপর তিনি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন এবং জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে ২০২১ সাল থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের অনুপস্থিতিতে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি রাজেন্দ্র কলেজে ভিপি থাকাকালীন হরতালের সময় বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে গিয়ে তার হাতেই বোমা বিস্ফোরিত হলে বাম হাতের মধ্যমা আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এজন্য তিনি ‘বোমা ফারুক’ নামে পরিচিত। তিনি সড়ক ও জনপথ বিভাগে ঠিকাদারি করলেও বর্তমানে কোনো কাজ করছেন না। বর্তমানে তিনি ঢাকায় বসবাস করছেন।

তার বিরুদ্ধে পূর্বের ছয়টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় চারটি এবং ঢাকায় দুটি মামলা রয়েছে।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আব্দুল্লাহ বিশ্বাস বলেন, এ ঘটনায় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক আতিকুর রহমান বাদী হয়ে ফারুক হোসেন ও নাসরিন আক্তারকে আসামি করে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নতুন করে একটি মামলা করেছেন। এ মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে এবং ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

Share This Article