জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ জানা যাবে আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর)।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ এ মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করবেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, এই মামলার তিন আসামির মধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ইতোমধ্যে ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্য দুই আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক রয়েছেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এটি ছিল প্রথম মামলা। ওই বছরের ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত প্রথম শুনানিতেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে চলতি বছরের ১৬ মার্চ সাবেক আইজিপি মামুনকেও আসামি হিসেবে যুক্ত করা হয়।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ১২ মে তদন্ত সংস্থা তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। পরবর্তীকালে ১ জুন তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন, যেখানে মোট ৫টি অভিযোগ আনা হয়—
- ১৪ জুলাই গণভবনে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান
- আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ
- রংপুরে ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা
- রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা
- আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা।
গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযোগগুলো গঠন করে। এরপর ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ২৩ অক্টোবর শেষ হয় মামলার যুক্তিতর্ক। ওই সময় চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।
অন্যদিকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের খালাস চান। একইভাবে রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুনের পক্ষে তাঁর আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদও খালাস আবেদন করেন।
এদিকে রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশে কোনো অস্থিতিশীলতা বা নাশকতার আশঙ্কা দেখা দিলে তা শক্ত হাতে প্রতিহত করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী—এমন মন্তব্য করেছেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। গতকাল বুধবার (১৩ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে, তাদের মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত।’
বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললেও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম দাবি করেন, বিচার সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হচ্ছে। তাঁর ভাষায়, ‘এ নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে, তা সরকারের বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত প্রোপাগান্ডার অংশ।’
সব মিলিয়ে আজকের দিনটি ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে—কারণ আজই নির্ধারিত হবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-সংক্রান্ত প্রথম মামলার রায় ঘোষণার দিন।