শিশুশ্রমে যুক্ত ১২ লাখ, প্রতি ১০ শিশুর ৪ জনের রক্তে সিসা

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

বাংলাদেশে শ্রমে নিযুক্ত রয়েছে ১২ লাখ শিশু। এদের মধ্যে প্রতি দশ শিশুর চার জনের রক্তেই উদ্বেগজনক মাত্রায় সিসা পাওয়া গেছে বলে ইউনিসেফ ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) নতুন এক জরিপে বলা হয়েছে। 

রবিবার (১৬ নভেম্বর)  ঢাকায় ইউনিসেফ ও অন্যান্য অংশীদারদের সহযোগিতায় বিবিএস দেশে শিশু ও নারীদের ওপর পরিচালিত বিস্তারিত জরিপ মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০২৫ (এমআইসিএস)-এর প্রকাশিত প্রাথমিক ফলাফল এই পরিসংখ্যান উঠে আসে।

বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স ফলাফল ঘোষণার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এতে বলা হয়, প্রায় ৬৩ হাজার পরিবারের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত এ জরিপে শিশুদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, সুরক্ষা ও বিকাশে বিদ্যমান অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়েছে। জাতীয় অগ্রাধিকার ও বৈশ্বিক মানদণ্ডের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ১৭২টি মানদণ্ড ও  ২৭টি এসডিজি সূচক জরিপের তুলে এনেছে। 

জরিপের ফলাফল থেকে দেশের সব বিভাগ, জেলা এবং তিনটি সিটি কর্পোরেশন এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে, যা নীতিনির্ধারকদের বৈষম্যের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে। 

নতুন জরিপের ফলাফল দেখা গেছে, দেশে শিশুশ্রমের হারও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে শিশুশ্রমের হার এখন ৯ দশমিক ২ শতাংশ। যা ২০১৯ সালের এই জরিপে ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থাৎ শিশুশ্রমের হার ছয় বছরের মাথায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে। যার  মধ্যে উত্তরাঞ্চলে বেশি বেড়েছে।

রাজশাহীতে শিশুশ্রমের হার ১২ দশমিক ৪ শতাংশ ও রংপুরে এর হার ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। এর ফলে দেশে ‘আরও ১২ লাখ শিশু ঝুঁকিতে পড়েছে’ বলে তুলে ধরে ইউনিসেফ। 

সাম্প্রতিক সময়ে ‘সিজারিয়ান সেকশনের’ হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্বের জরিপে যেখানে সিজারিয়ান সেকশনের হার ছিল ৯ শতাংশের মতো সেটি নতুন জরিপে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ শতাংশে। এখানে দেখা যায়, দরিদ্রের মধ্যে এ হার ৩৪ শতাংশ এবং ধনীদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ। 

স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে ৭৫ শতাংশে প্রসবের ক্ষেত্রে সিজারিয়ান সেকশনের হার বৃদ্ধি ‘স্বাস্থ্যঝুঁকি ও অর্থনৈতিক চাপ’ উভয়ই বাড়াচ্ছে বলে ইউনিসেফের ভাষ্য।

জরিপে বাংলাদেশের বাল্যবিবাহের হার কমেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে শিশু মৃত্যুর হার ও বাল্যবিবাহের মত সূচকে কিছুটা ইতিবাচক সাফল্য রয়েছে।

বাল্যবিবাহের হার ২০১৯ সালের ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ৪৭ শতাংশে নেমে এসেছে, তবে এখনও প্ৰায় অর্ধেক মেয়ের ১৮ বছর বয়সের আগেই বিয়ে হয়ে যায়। এছাড়া নবজাতকের ক্ষেত্রে প্রতি হাজারে মারা যায় ২২ জন, যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মোট মৃত্যুর (৩৩ শিশু) ৬৭ শতাংশ। পূর্বের জরিপে এ সংখ্যা ছিল ২৪।

চলতি বছরের শুরুতে জরিপের সময়ে শিশু মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে সিলেটে (২৯) এবং ঢাকায় (২৫)। সবচেয়ে কম মিলেছে খুলনা (১৫) এবং ময়মনসিংহ (১৮) বিভাগে।

যে নারীর বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে তাদের প্রত্যেক শিশু জন্মদানের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জরিপের ফল ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো শিশুর মৃত্যু হলে তা জন্মের কতদিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে, সেই হিসেবটি আমলে নেওয়া হয়েছে।

ঢাকায় স্বাস্থ্যসেবা এত উন্নত হওয়া সত্ত্বেও শিশুমৃত্যুর হার বেশি কেন-এক চিকিৎসকের প্রশ্নের উত্তরে, বিবিএস থেকে বলা হয়, জরিপের ফল আরও বিশ্লেষণ করলে এর উত্তর মিলবে। এখন যে তথ্য মিলেছে সেটিই প্রাথমিক ফলাফলে তুলে ধরা হয়েছে।

 

Share This Article

এ সম্পর্কিত আরও খবর