
আশিকুর রহমান
আমরা প্রতি বছর গ্রামের বাড়িতেই ঈদ করি, কারণ- এর আগের বছর ঈদে মা কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম মা তোমার কাছে ঈদ মানে কী? মা উত্তর দেয় আমার কাছে ঈদ মানে তোদের সবাইকে এক সঙ্গে কাছে পাওয়া। চাকরি সুবাদে আমরা সব ভাই-বোনই গ্রামের বাইরে থাকি। এদিকে ঈদ যতই কাছে আসছে কাজের চাপ ততই বাড়ছে। আর কয় দিন পরপরই মা ফোন খোকা তুই কবে বাড়ি আসবি? তার মানে কাজ যতই থাকুক না কেন বাড়ি যেতেই হবে। তাই সব কাজ গুছিয়ে নিয়ে ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে বের হলাম। বাস টার্মিনালে এসে দেখি কোন গাড়িতে সিট ফাঁকা নাই । বাড়িতে যেতেই হবে তাই একটা বাসের ছাদে উঠে পড়লাম। তখন সন্ধ্যা ৬ টা বাজে এদিকে একটু পরপরই মা’র ফোন খোকা তুই কত দূর! গাড়িতে ওঠার পর থেকেই জ্যাম। এবার অনেকক্ষণ হলো মা এর আর কোনো ফোন নাই। তাই ছোট আপুকে ফোন করলাম কিরে মা কি করে মা কি ঘুমিয়েছে? ছোট বোন জবাব দিলো না শুধু বেডের এদিক থেকে সেদিক করছে আর একটু পর পর গেটের আওয়াজ হলে বলছে দেখতো খোকা নাকি! বাচ্চারা পাশের ঘরে মেহেদী দেয়। বাড়িতে সব কিছুই আছে তারপরেও কি জানি নাই! কিসের জানি অভাব বাচ্চারাও খুববেশি হাসিখুশি না। রাত ১২ টা পার হয়ে গেছে খোকা এখনো বাড়ি আসেনাই। যে যেখানে পেরেছে ঘুমিয়ে পড়েছে শুধু মা ঘুমায় নাই। তার দুই চোখের পানি টলমল করছে তবুও কিসের জানি একটা বাধঁ। এই ভেবেই যে একটু পরেই হয়তো খোকা এসে ডাক দেবে যে মা আমার আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো। কিন্তু না খোকার কোনো খবর নাই মা’র ধৈর্যের বাদ ভেঙে আসছে। ফজরে নামাজের আজান হচ্ছে মা উঠে অযু করে এসে নামাজ পরে জায়গায় বসে তসবি তেলায়াত করছে আর দুই চোখের পানি টলমল করছে। হঠাৎ করেই ওর বাবার নম্বরে একটা ফোন এল না খোকার নম্বর থেকে। কে জানি কি বলো ওর বাবাকে! বাবার হাত থেকে ফোন টা পরে গেলো। মা’র বুঝতে বাকি রইলো না এবার তার চোখের পানির বাদ ভেঙে গেলো দুই চোখ দিয়ে জোর জোর করে পানি পড়তে রইলো। খোকার সাথে আর ঈদ করা হলো না। আর ঈদে খোকা আসবে না।