সংগীত শিল্পী এ. আর. রহমান। ভারত তথা বিশ্বব্যাপী যার নাম-ডাক। বিশেষ করে গানপ্রিয় মানুষগুলি তাকে এক নামে চেনে। সংগীতে অস্কার জয় করেছেন অনেক আগেই। কিন্তু মাঝেমধ্যে কিছু উদ্ভট কর্মকান্ড করে সমালোচনার সৃষ্টি করাটাও যেন তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের “কারার ওই লৌহ কপাট” গানটির সুর বিকৃত করে নতুনভাবে সুরারোপ করে কয়েকজন শিল্পীর কণ্ঠে তুলে রেকর্ড করেছেন এবং ইতোমধ্যে একটি সিনেমায় তা সংযোজন করা হয়েছে। শুধু তাই নয় ইতোমধ্যে এ. আর. রহমান ইউটিউব চ্যানেলে গানটি ছেড়েছেন। মুহূর্তের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়েছে এবং সমালোচনার ঝড় উঠেছে। গানপ্রিয় সকল মানুষের মনে আঘাত হেনেছে। গানপ্রিয় মানুষদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সবাই হতাশ হয়েছে। নিন্দা প্রকাশ করছে। তার অর্জিত অস্কারটাও যেন তুচ্ছতাচ্ছিল্যে পরিণত হয়েছে।
সুদীর্ঘ ১০০ বছরের ভালো লাগাটাকে ইচ্ছাকৃতভাবে তিনি নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন! যে গানটা দিয়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন হয়েছে, ব্রিটিশদের হটিয়ে ভারত হয়েছিল। পাকবিরোধী আন্দোলন হয়েছে, পাকিদের হটিয়ে বাংলাদেশ হয়েছিল। যে গানের সাথে অসংখ্য স্মৃতি, অসংখ্য ঐতিহ্য, অসংখ্য অর্জন। যে সুর কোটি কোটি মানুষের কানে লেগে আছে, মনে গেঁথে আছে, সেই সুরকে বিকৃত করেছেন তিনি! এই বিকৃতিতে শুধু কাজী নজরুলকেই অসম্মান করেনি, কোটি কোটি মানুষকে অসম্মান করেছে। কোটি কোটি মানুষের মনে আঘাত করে, খানখান করে দিয়েছে। মনে রাখা উচিত, কাজী নজরুল ইসলামের মতো “অল-রাউন্ডার” পৃথিবীতে বারবার জন্মায় না এবং কাজী নজরুলের সৃষ্টির মতো সৃষ্টি কাজী নজরুল ছাড়া হয়ও না।
আহারে ভাইরালের যুগ, আহারে রুচির দূর্ভিক্ষ! ভাইরালের যুগে সত্যি রুচির দূর্ভিক্ষটাকে আরও প্রবলভাবে চিনিয়ে দিলেন মি. রহমান। উনি তো এমনিতেই বেশ পরিচিত। ভাইরাল হওয়াটা এতই জরুরি ছিল? তো অন্য কিছু নিয়ে করতে পারতো। তাছাড়া এ গানটি বাংলাদেশের রণসংগীত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। একটি দেশের জাতীয় পর্যায়ের একটি গানের সুর বিকৃত করা মোটেও উচিত নয়।
মি. রহমানের সুযোগ আছে সংশোধন হওয়ার। বিকৃত সুরের “কারার ওই লৌহ কপাট” গানটি ইউটিউব থেকে দ্রুত সরিয়ে ফেলা উচিত। বিকৃত সুরের ঐ গানটা যে সিনেমায় ব্যবহার হবে বা হচ্ছে, সেই সিনেমার সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত, বিকৃত সুরের গানটা ব্যবহার থেকে বিরত থাকা এবং প্রকৃত সুরের গানটা ব্যবহার করা। ন্যূনতম ভদ্রতাটুকু রক্ষা করা উচিত।
লেখক: আমিনুল নোহালী, কবি, গীতিকার, সুরকার, গায়ক, সম্পাদক, উপস্থাপক ও সরকারি কর্মকর্তা