
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত সকল শ্রেণির মানুষের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে বিশ্ববাজারের তুলনায় বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি, যার ফলে বিপাকে পড়ছেন সাধারণ মানুষজন। এমন পরিস্থিতিতে কী ভাবছে গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি) এর শিক্ষার্থীরা। তা তুলে ধরেছেন শিক্ষার্থী ফারহান হোসেন।
বাড়ছে আর্থিক ও মানসিক চাপ
দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। গত কয়েক মাস ধরে দ্রব্যমূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা। দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতির কারণে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি যেমন: পড়াশোনার জন্য যাবতীয় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে হিমশিম খাচ্ছি, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার সুযোগ কমে যাচ্ছে, লেখাপড়ায় মনোযোগে বিঘ্ন ঘটছে, বাড়ছে মানসিক চাপ। চাল, ডাল, আলু, ডিম, চিনি, তেল, মাছ, ব্রয়লার মুরগীর মাংস, সবজিসহ সব ধরনের খাবারের দাম বেড়েছে যার ফলে খরচ কমানোর জন্য দিনে তিনবেলার পরিবর্তে দুইবেলা খেয়ে জীবনধারণ করতে হচ্ছে। শুধু কি তাই, বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল সব কিছুই বৃদ্ধি পেয়েছে।
সব মিলিয়ে কম করে হলেও মাসিক খরচ এখন দুই হাজার টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। প্রতি মাসে বাড়ি থেকে যে টাকা নিচ্ছি তাতে আর হাতে অবশিষ্ট কিছু থাকছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সামনের দিনগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপর নেমে আসবে এক ভয়াবহ আর্থিক ও মানসিক চাপ। যা অনেক মধ্য ও নিম্নবিত্ত শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
রিদুয়ানুল ইসলাম মানিক
২য় বর্ষ, বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ।
রোধ করতে হবে দুর্নীতি ও নানাবিধ অনিয়ম
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি যে শুধু আমাদের দেশের সমস্যা এমনটা ভাবা উচিৎ নয়। আমরা যদি বৈশ্বিক দেশগুলোর দিকে তাকাই, সেখানেও এই উর্ধগতি লক্ষ করি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি আসলে কেনো হয়? যখন চাহিদার চাইতে পণ্যের মজুদ কম থাকে। আমাদের দেশ হলো আমদানি নির্ভর। এই আমদানি করার জন্য বিনিময় মুদ্রা হিসেবে প্রয়োজন বৈশ্বিক কারেন্সি ডলার। এই ডলার সংকটের কারণে আজ দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি। ডলা। ডলার হলো বৈদেশিক কারেন্সি যা আমরা রপ্তানি করে অথবা রেমিট্যান্স এর মাধ্যমে অর্জন করি। আমাদের এই রপ্তানি আমদানির চাইতে অনেক কম এবং রেমিট্যান্স এর টাকা হুন্ডির মাধ্যমে কিছু অসাধু চক্রের মাধ্যমে দেশে আনা হয় যার ফলে আমরা ডলার সংকটে ভুগি।
বর্তমান সরকারের ধার্য্য করা অতিরিক্ত ট্যাস্ক এবং অসাধু কিছু ব্যাবসায়ী সরকারি আমলা কর্মকর্তাদের দুর্নীতি কারণে দেশের মানুষের এই দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের উচ্চপদস্থ আমলা এমপি- মন্ত্রীরা বিদেশে বিশাল অংকের টাকা পাচার করবে। যা করতে হবে ডলারের মাধ্যমে এর ফলে আমাদের দেশে আমদানি পণ্য উচ্চদাম দিয়ে কিনতে হবে। এ সকল পরিস্থিতি সামাল দিতে সমাজের উপরস্থ চেয়ারে বসে থাকা আমলাদের দূর্নিতি এবং হুন্ডি চক্রের রোধ এবং কিছু অসাধু ব্যাবসায়ীকে রোধ করতে পারলেই এই দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি কিছুটা হলেও রোধ করা যাবে।
রাইসুল ইসলাম
২য় বর্ষ, ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সাইন্স অনুষদ।
শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বৃত্তি ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে
চলমান উচ্চ মূল্য স্ফীতের মধ্যে দ্রব্যমুল্যের ঊর্ধগতিতে সবারই নাভিশ্বাস। ধারনা করা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বা সংকটের কারনে সব জায়গায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এর পিছনে আরও অনেক কারণ রয়েছে। এ পরিস্থিতির সবচেয়ে ভয়াবহ শিকার সাধারণ শিক্ষার্থীরা, নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবার। যেসব শিক্ষার্থীরা ঢাকায় থাকে, টিউশনি বা পার্ট টাইম জব করে নিজের খরচ নিজে চালায়,তাদের এই আয় দিয়ে বর্তমান সময়ে চলা খুবই কষ্টকর। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত থেকে আসে এবং বেশিরভাগই বাড়ি ঢাকার বাহিরে হওয়ায় মেসে বা হলে থাকতে হয়। এখানে থেকেই তারা পড়াশোনা সাথে টিউশনি বা কেউ পার্টটাইম জব করতে হয় তাদের। কিছু সংখ্যক বাড়ি থেকে টাকা আনলেও, টাকার পরিমাণ তো বাড়েনি, সে হিসেবে এই স্বল্প খরচ দিয়ে চলা মুশকিল হয়ে পড়ে।এতে সবদিক থেকেই অনেক আত্মত্যাগ করে, চাহিদা কমিয়ে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেয়ে চলতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফী এবং যাবতীয় আনুষাঙ্গিক খরচ। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ও শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে যা অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু আছে। এ প্রক্রিয়া চালুর ফলে শিক্ষার্থীদের উপর নেমে আসা এই বাড়তি চাপ কিছুটা কমবে বলে আমি মনে করি।
তামান্না তাহের নাজমিন
২য় বর্ষ, রসায়ন বিভাগ।
নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা উচিত
দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির কারণ হচ্ছে ব্যবসায়ীদের অত্যাধিক হারে মুনাফা লাভের আসক্তি, অবৈধভাবে যে কোনো পণ্যের মজুত বৃদ্ধি, খাদ্যদ্রব্য কিংবা বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল, ন্যায় সঙ্গত ও নির্ধারিত মূল্য নির্ধারণ না করা, বাজার তদারকিতে অনীহা ইত্যাদি। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সমাধানে টিসিবিকে ব্যবহার করে বা বাজার মনিটরিং জোরদার করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা যেতে পারে কিন্তু তাতে দীর্ঘমেয়াদি তেমন কোনো সমাধান পাওয়া যাবে না। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে হলে প্রয়োজন একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা। ক্ষুদ্র আমদানিকারিদের সক্রিয় করে দেশব্যাপী আমদানি অবারিত করার মাধ্যমে এবং সে সঙ্গে দেশের কৃষিপণ্য আধুনিক পদ্ধতিতে স্টোরেজ করার সুযোগ সৃষ্টি করার পাশাপাশি সুশৃঙ্খল বাজার ব্যাবস্থার প্রবর্তন করলে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার স্থায়ী সমাধান খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।
মাহামুদুল হাসান সহিদ
১ম বর্ষ, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ।