![](https://bdchitro.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
নামসর্বস্ব পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালের স্থানীয় সংবাদদাতা পরিচয়ে ভয়ভীতির মাধ্যমে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে রাজধানীর ডেমরা এলাকায় গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন দুই ব্যাক্তি।
গতকাল সোমবার বিকালে ডেমরার কোনাপাড়ার বাশেরপোল এলাকার ইস্টার্ন হাউজিং সোসাইটিতে এ ঘটনা ঘটে। গণধোলাইয়ের শিকার কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারীরা হচ্ছেন- শরীফুল ইসলাম ও মাকসুদুল আলম রবি। উত্তেজিত জনতার তোপের মুখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে নিজেদের আত্মরক্ষা করেছেন আরও কয়েজন সাংবাদিক পরিচয়দানকারী অজ্ঞাত ব্যক্তি ও ক্যামেরাম্যান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এরা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিলেও ইস্টার্ন হাউজিং সোসাইটি কর্তৃপক্ষের কাছে সাংবাদিক পরিচয়ের স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ দেখাতে রাজি হননি। একইসঙ্গে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ীসহ নতুন-নতুন ভবন নির্মাণসংশ্লিষ্ট মালিকদের কাছে চাঁদা দাবি করেছেন। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা ভবন এবং ভবনে বসবাসকারীদের ব্যক্তিগত চলাফেরার ভিডিও ধারণ করছিলেন। একইসঙ্গে চাঁদা না দিলে ‘রাজউক দিয়ে ভবন ভেঙে দেওয়া’ এবং ‘ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়া’ হবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন।
ইস্টার্ন হাউজিং সোসাইটি সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি ও হাউজিং এলাকায় বসবাসকারী অনেকের দাবি, নামসর্বস্ব পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয়ে ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় একদল ‘যুবক-তরুণ’ প্রায়ই অনুপ্রবেশ করে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও নির্মানাধীন একাধিক ভবন মালিকের কাছে চাঁদা দাবি করে থাকেন। চাঁদা না দিলে রাজউকের লোক ডেকে এনে ভবন ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ভিডিও ধারণ করে ভাইরাল করার হুমকি দেয়। মুখে সাংবাদিক পরিচয় দিলেও কথিত এসব সাংবাদিকেরা দলবদ্ধভাবে অস্বাভাবিক আচরণের মাধ্যমে স্থানীয়দের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্নের চেষ্টা চালায়। এদের সঙ্গে স্থানীয় ‘কিশোর গ্যাং’রাও মাঝেমধ্যে হাউজিং এলাকায় অনুপ্রবেশ করেন। এ সময় এলাকায় ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়।
গতকাল সোমবার বিকালে কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারী ১০-১২ জনের সংঘবদ্ধ সদস্যরা ভিডিও ক্যামেরা, স্টিল ক্যামেরাসহ ইস্টার্ন হাউজিং প্রবেশের চেষ্টা করলে হাউজিংয়ের প্রধান ফটকের দায়িত্বরত পাহারাদারগণ তাদের পরিচয় জানতে চান। তারা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দ্রতগতিতে হাউজিং এলাকায় ঢুকে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন ভবন, নির্মানাধীন ভবন, ব্যবসায়ীদের দোকানপাট এবং নারী-শিশুসহ হাউজিংয়ে বসবাসকারী পথচারিদের ভিডিও ধারণ করতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ইস্টার্ণ হাউজিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলামসহ সোসাইটির কয়েকজন সদস্য তাঁদের কাছে গিয়ে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া চেষ্টা করেন।
এ সময় নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিলেও কে কোন পত্রিকার সাংবাদিক, তা জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তারা। একইসঙ্গে একটি ভবন থেকে নারী-শিশুসহ বের হওয়া কয়েকজনের ভিডিও ধারণ করতে গেলে, সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অনুমতি ছাড়া নারী-শিশুদের ছবি ধারণ করতে নিষেধ করেন। বাধা না শোনায় শরিফুল নামের এক ক্যামেরাম্যানের ক্যামেরা হাত দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন সোসাইটির সম্পাদক। এ সময় শরিফুল ও তার কয়েকজন সঙ্গী নিজেদের সাংবাদিক পরিচয়ের পাশাপাশি স্থানীয় এক প্রভাবশালীর পরিচয় দিয়ে ইস্টার্ন হাউজিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। জাহিদকে কথিত সাংবাদিকদের কাছে উদ্ধারের জন্য সোসাইটির অন্য সদস্যসহ স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে সাংবাদিক পরিচয়দানকারীরা তাঁদেরও ভিডিও ধারণের চেষ্টা করেন।
এই পর্যায়ে সোসাইটিতে বসবাসকারী ভুক্তভোগীরা উত্তেজিত হয়ে কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারী দুইজনেকে ‘উত্তম-মধ্যম’ দেওয়া শুরু করলে বাকিরা পালিয়ে যান। এই ঘটনায় সোসাইটির পক্ষ থেমে মামলা দায়ের করতে চাইলে পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেন। অন্যদিকে, গণধোলাইয়ের শিকার দুই ব্যক্তির পক্ষের অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলা দায়ের করেন।