টানা দরপতনে বিপর্যস্ত দেশের শেয়ার বাজার। গতকাল সোমবারও মূল্যসূচকের পতনের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এ নিয়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত ৭ কার্যদিবসে সূচক কমেছে ২৬১ পয়েন্ট। অব্যাহত পতনে মূল্যসূচক চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে চলে এসেছে। এছাড়া লেনদেন কমতে কমতে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমেছে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্র। শেয়ারবাজারের এ দুরবস্থায় দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে। এছাড়া, একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য ‘শূন্য’ ঘোষণার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে। তারা বলেছেন, এই ব্যাংকগুলোতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি শেয়ার রয়েছে। এখন বলা হচ্ছে, তাদের শেয়ারের মূল্য ‘শূন্য’। এটা কীভাবে মেনে নেবেন বিনিয়োগকারীরা? ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হওয়ার পেছনে কি তারা দায়ী? বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুনর্গঠন করা হয়েছে এক বছরের বেশি সময় হয়েছে। কিন্তু বাজারে এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। ডিএসই তথ্য বলছে, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা এতটাই প্রকট যে, লেনদেনে ভালো-মন্দ সব ধরনের শেয়ারেরই ঢালাও দরপতন হচ্ছে। গতকাল ডিএসইতে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শুরু হলেও অল্প সময় পরই একের পর এক শেয়ারদর কমতে থাকে। দিনশেষে এই বাজারে লেনদেনকৃত মোট ৩৮৬টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৭০টির। আর কমেছে ২৭৫টির। অর্থাৎ, লেনদেনকৃত ৭১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদরই কমেছে। আর ৪১টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। এরমধ্যে ভালো অর্থাৎ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানি যারা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেয়, সেই কোম্পানিগুলোর মধ্যে মাত্র ৪৩টির শেয়ার দর বেড়েছে। কমেছে ১৪৪টির দাম এবং ২৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের ‘বি’ ক্যাটাগরির অর্থাৎ ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ১৬টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৫২টির দাম কমেছে এবং ১১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১১টির শেয়ার দাম বেড়েছে। কমেছে ৭৯টির এবং ছয়টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ, বাজারে ভালো-মন্দ সব ধরনের শেয়ারেরই ঢালাও দরপতন হচ্ছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৯ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮৬০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১০ পয়েন্টে ও বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ১৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯১০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন এ প্রসঙ্গে গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো ভালো সংবাদ নেই। যে কারণে বাজারে ধারাবাহিকভাবে পতন হচ্ছে। পাঁচ ব্যাংকের বিলুপ্তির ফলে শেয়ার মূল্য ‘শূন্য’ ঘোষণায় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। অথচ ব্যাংকগুলোর ধসের জন্য দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, অডিটর, বানোয়াট রেটিং ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতা দায়ী। অথচ তাদের কাউকে ধরা হচ্ছে না। মিনজাহ মান্নান ইমন বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে শেয়ার কিনেছেন, এটাই কি তাদের অপরাধ? তিনি বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বাজারের উন্নয়নে অনেক পদক্ষেপ নিচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে হয়তো এসবের সুফল পাওয়া যাবে, কিন্তু স্বল্প মেয়াদে বিনিয়োগকারীরা কিছু পায়নি।