
বৈধ পথে দেশে টাকা পাঠাতে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ হাউসে প্রবাসীদের ভিড় দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে সরকারি ছুটির দিনে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোতে প্রবাসীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট মাসে মালয়েশিয়া প্রবাসীরা বৈধ পথে দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় ২৭৬.৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের আগস্ট মাসের তুলনায় প্রায় ৮.৫ শতাংশ বেশি। সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ দুই স্থানে থাকলেও, মালয়েশিয়া থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে।
এনবিএল মানি ট্রান্সফারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলী হায়দার মর্তুজা বলেন,“সরকার ঘোষিত প্রণোদনা, ব্যাংকগুলোর দ্রুত সেবা এবং প্রবাসীদের সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে হুন্ডির পরিবর্তে বৈধ পথে টাকা পাঠানো উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।”
তিনি আরও জানান, মালয়েশিয়ায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়মিতভাবে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করছে। শিক্ষায় বিনিয়োগ, পারিবারিক ব্যয় নির্বাহ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায় পুঁজি গঠনে এই অর্থ প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে এবং আমদানি ব্যয় নির্বাহে দেশের অর্থনীতি চাপমুক্ত থাকবে।
এনবিএল মানি ট্রান্সফারের সিস্টেম অ্যানালিস্ট ও ম্যানেজার মোহাম্মদ শামসুদ্দীন এনাম বলেন, “ব্যাংকিং চ্যানেল সহজ হওয়ায় এবং মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে লেনদেনের সুবিধা থাকায় এখন বৈধ পথে টাকা পাঠানো অনেক বেশি সহজ ও নিরাপদ হয়ে উঠেছে।”
এদিকে মালয়েশিয়া প্রবাসী সোহাগ মিয়া ও মোহাম্মদ জাকির হোসেনের মতে, নতুন বাংলাদেশ গঠনে প্রবাসীদের অঙ্গীকারকে আরও শক্তিশালী করতে হলে সরকারকেও প্রবাসীদের দাবি পূরণে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের মতে, বর্তমানে রেমিট্যান্স প্রণোদনা ২.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ৫ শতাংশ করা উচিত।
প্রবাসীরা বলছেন, সরকার যদি অন্য খাতে ১০ শতাংশ লাভের আশায় বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে পারে, তবে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠাতে ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিলে সরকারের ক্ষতি হবে না, বরং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও বাড়বে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বৈধ পথে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের ডলার সংকট কাটবে এবং অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে। প্রবাসীদের সচেতনতা ও সরকারের সহায়ক নীতি একসঙ্গে কাজ করলে আগামীতে আরও ইতিবাচক ফল আসবে বলে তারা আশা করছেন।
ইউআরএল কপি করা হয়েছে