রোগীর কাছ থেকে টাকা নেয়া, নার্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে তদন্ত নিয়ে

বাংলাদেশ চিত্র ডেস্ক

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সিং সুপারভাইজার শিউলি আক্তারের বিরুদ্ধে রোগীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা নেয়ার অভিযোগের তদন্ত হওয়ার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও তার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সিং সুপারভাইজার শিউলি আক্তারের বিরুদ্ধে নরমাল ডেলিভারির মতো সরকারি সেবা দেওয়ার পর রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় সোনাহার মল্লিকাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মশিউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমন ধর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আবু নোমান মোঃ ইফতেখারুল তৌহিদকে সভাপতি করে একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটি গত ২৮ জুলাই ভুক্তভোগীদের নির্দিষ্ট সময়ে লিখিত অভিযোগ দাখিলের সুযোগ দিয়ে একটি নোটিশ জারি করে। হাসপাতাল সূত্র জানায় নোটিশ অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকা থেকে ভুক্তভোগীরা উপস্থিত হয়ে তাদের অভিযোগের বিষয়ে জানায়। সেদিন নার্সিং সুপারভাইজার শিউলি ছাড়াও আরো অন্তত দুইজন নার্সের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির নিকট একই রকম অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। তবে তদন্ত কমিটি সে সময় এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কোন তথ্য জানায় নি।

যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদক গত ৮ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড় জেলা সিভিল সার্জনের কাছে তথ্য অধিকার আইনে একটি আবেদন করেন। সেখানে তিনি জানতে চান তদন্ত কমিটি নার্স শিউলি আক্তারের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন কী না এবং পেয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তথ্য অধিকারের আবেদনর পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চগড় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়, গঠিত তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন কেন্দ্রীয়ভাবে অধিকতর তদন্তের জন্য মহাপরিচালক, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এ কারণে জেলা পর্যায়ে প্রতিবেদন সরবরাহ করা যায়নি এবং কোনো সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়নি।

অভিযুক্ত নার্স শিউলি আক্তারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের তদন্ত শেষ হওয়ার দুই মাস পেরিয়ে গেছে, তবু নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রদানে অনীহা এবং ব্যবস্থা গ্রহণে টালবাহানার কারণে তদন্ত ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদন ধামাচাপা দিতে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়েছে কিনা সে প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য ডা. মাহবুব সুমন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমরা তদন্তে যা পেয়েছি তা অফিসিয়ালিভাবে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আপনার কিছু জানার থাকলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন।

অন্যদিকে, তদন্ত শেষ হওয়ার দুই মাস পরও কেন অভিযুক্ত নার্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি-এমন প্রশ্নের জবাবে পঞ্চগড় জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, আমরা নার্সদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। তাদের বিষয়টি সরাসরি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন মহাপরিচালকের নিকট পাঠিয়েছি। অধিদপ্তর থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি।

Share This Article