
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
সেবার নামে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল হাসপাতালটি। কয়েক বছর ধরে সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত ছিল রোগীরা। কয়েকজন চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দিয়ে করেছিল শক্ত সিন্ডিকেট। তাদের মাধ্যমে হাসপাতালের খাবার কেনাকাটায় অনিয়ম, সরকারি ঔষধ কালোবাজারে বিক্রয়, প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কমিশনের ভিত্তিতে দালালের মাধ্যমে রোগী প্রেরণ, নিজের পছন্দের লোকদের সাথে টেন্ডার বানিজ্য, সরকারিভাবে হাসপাতালে আসা ফ্যান নিজের বাড়িতে নিয়ে ব্যবহার করা, এম্বুলেন্স ব্যবহার করে জেলার বাইরে ব্যক্তিগত কাজ করা, হাসপাতালের জেনারেটর ব্যবহারে তেল বানিজ্য, হাসপাতালের জমিতে চাষ হওয়া কলা গ্রামের বাড়িসহ শুভাকাক্সক্ষীদের বিতরণসহ মানুষ বুঝে স্বজন প্রীতিই ছিল তার কাজ। চলতি বছরের ৫ আগষ্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা জেলার বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতি বিরোধি আন্দোলন করে। তাদের মধ্যে অনেকে ছুটি নিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করে।
এরই ধারাবাহিকতায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ সৈয়দ রেজাউল ইসলামকে তার অফিস কক্ষে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তোপের মুখে ফেলে। এসময় তাদের সাথে রোগীর স্বজন, হাসপাতালে চিকিৎসা বঞ্চিতরা যোগ দেন এবং তার অনিয়মের কথা তুলে ধরেন। সেসময় তাকে ১০ দিনের ছুটি নিয়ে কর্মস্থল ছাড়তে বাধ্য হতে হয়। শিক্ষার্থীদের সামনে সোমবার বেলা ১২ টার দিকে ছুটির আবেদনে স্বাক্ষর করেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ সৈয়দ রেজাউল ইসলাম এর আগের কর্মস্থলে দুর্নীতির দায়ে সেখান থেকে বদলী হন এখানে। ঝিনাইদহে যোগদানের পর থেকে তিনি ওষুধ কেনাকাটা, খাবারের টেন্ডার, হাসপাতালের মেরামত ও নির্মানে দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহন করেন। তার অনুপস্থিতিতে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ আনোয়ারুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করবেন বলে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দপ্তর সুত্রে জানা গেছে।
তবে ডাঃ আনোয়ারুল ইসলাম দীর্ঘদিন এই প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করছেন। রোগীর চিকিৎসাসেবা দিলেও হাসপাতালের নার্সদের খারাপ আচরণের প্রতিবাদ করা এক সংবাদকর্মীকে ইতিপূর্বে ধাক্কা দিতে দিতে বের করে দেন। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক মহলে তিনি ছিলেন আলোচনায়। এছাড়া হাসপাতালের ডা. জাকির হোসেন সরকারি হাসপাতালের থেকে তার ব্যক্তিগত চেম্বারে বিভিন্ন মাধ্যমে রোগী চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
এভাবে করে তিনি ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর এলাকায় গড়ে তুলেছেন ১০ তলা বাড়ি। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা থেকে রোগীদের বঞ্চিত করে ব্যবসায়িকভাবে নেওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং ২০ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালটি হোক মানবসেবার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত এমনটিই প্রত্যাশা করেন ঝিনাইদহবাসী।
একই দিনে ঝিনাইদহ ডায়বেটিস হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শামীম ইসলামের অনিয়মের সূত্র ধরে জেরার মুখে ফেলা হয়। সেসময় তার বিরুদ্ধে ডায়বেটিস হাসপাতালে নিয়ম বহিভর্’তভাবে অপারেশন, নিজের মত করে ফার্মেসী ব্যবসা, বেশি বেশি আয়ুর্র্বেদিক ঔষধের ব্যবহার, ভ্রমনের কথা বলে লাভের শতকরা ১০ ভাগ টাকা উঠিয়ে আত্মসাৎ করা এবং অত্র প্রতিষ্ঠানটি ব্যক্তিগত ভাবে পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সোমবার দুপুরে ১০ দিনের ছুটি নিয়ে তাকেও আবেদন পত্রে স্বাক্ষর করতে দেখা যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এলমা খাতুন জানান, ঝিনাইদহ ডায়বেটিস হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শামীম ইসলামের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা থেকে তদন্ত টিম এসে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন কর্তৃপক্ষ। তিনি আরও জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জেলায় মোট ১০ জন সমন্বয়ক রয়েছে। তারা বিভিন্ন ভাগে কাজ করছেন। ত্রাণ সরবরাহে একটি টিম জেলার বাইরে রয়েছে। সোমবার ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ও ডায়বেটিস হাসপাতালে দুনীতি বিরোধী আন্দোলনে সমন্বয়ক আবু হুরায়রা, আল মামুন, এলমা খাতুন, সাইদুর রহমান ও রত্না খাতুনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।