
স্টাফ রিপোর্টার
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ২০ থেকে ২৫ বছর জেল খাটার পর তারা জামিনে জেল থেকে বের হয়ে এসেছে। তারা যদি বের হয়ে এসে সমাজে বিশৃঙ্খলা না করে ভালো। তবে যদি বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া যাবে না।
গতকাল সোমবার দুপুরে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসসহ সকল সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তেলবাজি বন্ধ করতে হবে। কে ভবিষ্যতে আসবে সেদিকে খেয়াল রাখবেন না। সিভিল ড্রেসে (সাদা পোশাক) কাউকে অ্যারেস্ট (গ্রেফতার) করা চলবে না। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন পুলিশের কাছে কোনোভাবে হয়রানি না হন, আবার কোনো দোষী ব্যক্তি যেন ছাড় না পায়। সরকারি কর্মচারীরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হবেন না। সমাজ ও রাষ্ট্রের বড় ব্যাধি হলো ঘুষ। এটি বন্ধ না হলে দেশের অবস্থার পরিবর্তন হওয়া কঠিন। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীতে নিয়োগ ও বদলিতে আর্থিক লেনদেন বন্ধ করতে হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তি যেন শাস্তি না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দিত। এতে ১০ জনের নাম আর ২০০-৩০০ থাকত বেনামী। এখন পুলিশের থেকে চলে গেছে সিভিলে, ১০ জনের নাম বাকি ২০০-৩০০ বেনামী। যারা দোষী নয়, তাদের নাম দিয়ে আমাদের তদন্ত কাজ কঠিন করছেন এবং একজন কালপিটও কিন্তু বের হয়ে যাবে। অনেক ভুয়া মামলা হচ্ছে। সব ভুয়া মামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো দোষীকেও ছাড় দেওয়া হবে না এবং নিরপরাধ কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন থানা থেকে অস্ত্র লুট হয়েছে। কিন্তু অভিযানে এখনো আশানুরূপ অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই অস্ত্রগুলো যতো দ্রুত সম্ভব উদ্ধার করতে হবে। লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের মধ্য দিয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন জায়গায় মব জাস্টিসের সংখ্যা বেড়ে গেছে। অনেকে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। যে কারণে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। যদি কেউ অন্যায় করে তাহলে তাকে আইনের হাতে সোপার্দ করেন। এটা বন্ধে জোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমাদের পাশর্^বর্তী দেশের অনেক মিডিয়া মিথ্যাঘটনা তৈরি করে প্রচার করছে। আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলোকে সত্যঘটনা তুলে ধরতে হবে। তাহলেই তাদের অসত্য প্রচার সবার সামনে দৃশ্যমান হবে। কোনো অবস্থাতেই যেন গুজব না ছড়ায়। এদেশ সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে কোনো সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু নেই, আমরা সবাই বাংলাদেশী। আইন সবার জন্য সমান। এবছর কোনো অঘটন ছাড়াই দেশব্যাপী দুর্গাপুজা উদযাপিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বাজারে সয়াবিন তেল, আলু ও পেঁয়াজের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। সয়াবিন তেল আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। আলুর দাম বেশি থাকায় কৃষকের চেয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি লাভবান হচ্ছে। আগামী রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, খুলনা নেভাল এরিয়া কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল গোলাম সাদেক, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০৫ ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড এর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজহার সিদ্দিকী, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ জুলফিকার আলী হায়দার, ডিজিএফআই এর কর্ণেল সৈয়দ আসাদুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার টিএম মোশাররফ হোসেন। এতে সভাপতিত্ব করেন খুলনা রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি মোঃ রেজাউল হক।
সভায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, খুলনা রেঞ্জ পুলিশ, রেঞ্জস্থ সকল জেলার পুলিশ ইউনিট, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, কারা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তা, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলের ছাত্র প্রতিনিধি ও বিভিন্ন ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
উপদেষ্টা বিকেলে অতিরিক্ত পরিচালক খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার খুলনা অঞ্চলে কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় যোগদান করেন।