

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে পৌর যুবলীগের নেতা ও পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম দলবল নিয়ে হাজির হন। সম্মেলেন মাঠের এক পাশে দলবল নিয়ে তাঁর দাঁড়িয়ে থাকার একটি ছবি ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা চলছে।
নজরুল ইসলাম বকশীগঞ্জ পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক ও বকশীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র। তাঁর বড় ভাই মানিক সওদাগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক। গত মঙ্গলবার বিকেলে বকশীগঞ্জ খয়ের উদ্দিন মাদ্রাসা মাঠে ১৬ বছর পর বকশীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন মানিক সওদাগর। বড় ভাইয়ের পক্ষে লোকজন নিয়ে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম।
ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম সম্মেলন মাঠের পশ্চিম পাশে হলুদ রঙের পাঞ্জাবি ও সাদা রঙের পায়জামা পরে দাঁড়িয়ে আছেন। আর তাঁকে ঘিরে ২০–৩০ জন যুবক দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া কয়েকজন বিএনপির কর্মী জানান, সম্মেলনের দিন বেলা আড়াইটার দিকে দলবল নিয়ে মাঠে হাজির হন নজরুল ইসলাম। একই স্থানে দাঁড়িয়ে থেকে তিনি সম্মেলনমঞ্চের নেতাদের বক্তব্য শোনেন। তাঁর উপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সম্মেলনস্থলের উত্তর পাশে শামিয়ানার বাইরে চলে যান তিনি।
নজরুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। তবে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগর মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নজরুল ইসলাম আমার ছোট ভাই। সে সম্মেলনে উপস্থিত ছিল কি না, আমি জানি না। সে একসময় যুবদলের নেতা ছিল। পরে বিএনপিকে বাঁচাতেই যুবলীগে গেছে। আমাদের দলের যখন দুর্দিন ছিল, তখন সে যুবলীগে থাকলেও আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সহযোগিতা করেছে। আমরা বিএনপির কর্মসূচি পালন করতে পারতাম না, তখন আমার ভাই আমাদের পাহারা দিয়ে কর্মসূচি পালন করার সুযোগ করে দিয়েছে।’
তাহলে প্রতিদান হিসেবে যুবলীগ নেতা ভাইকে সহযোগিতা করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মানিক সওদাগর বলেন, ‘আমি তাঁকে কোনো সহযোগিতাই করছি না। সে যখন নির্বাচন করেছে, কেউ বলতে পারবে না যে আমি তাকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করেছি। একটা ছবিও কেউ দেখাতে পারবে না।’
দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় নজরুল ইসলাম উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৫ সালে জামালপুর-১ (বকশীগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের মাধ্যমে তিনি যুবলীগে যোগ দেন। ২০১৬ সালে পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক হন। পরে ২০১৯ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বকশীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদেও নির্বাচিত হন। এরপর থেকে এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে থাকেন তিনি। পৌরসভায় ছিল তাঁর একক নিয়ন্ত্রণ। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হন তিনি। ৫ আগস্টের পর বকশীগঞ্জ থানায় পুলিশ একটি ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা তিনটি মামলা করেছেন। বেশির ভাগ মামলায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হলেও নজরুল ইসলামকে আসামি করা হয়নি। বেশির ভাগ নেতা-কর্মী পলাতক থাকলেও নজরুল এলাকাতেই থাকছেন।
সম্মেলনের আগের কয়েক দিন ধরে বকশীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন কেন্দ্র করে দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ও বিভক্তি দেখা দিয়েছিল। সম্মেলন ঘিরে দিনভর উত্তেজনা থাকলেও কোনো অঘটন ছাড়াই সম্মেলন শেষ হয়েছে। তবে নতুন কমিটি এখনো ঘোষণা করা হয়নি।