চেষ্টা, ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম পাল্টে দিতে পারে মানুষের জীবনমান যা প্রমাণ করেছেন সফল ফ্রিল্যান্সার এবং ইউটিউবার (ডিজিটাল কন্টেন্ট ক্রিয়েটর) মো: ইমরান হোসাইন। তার বিশ্বাস জীবনের লক্ষ্য ঠিক রেখে কঠোর পরিশ্রম করে গেলে ইনশাআল্লাহ সফলতা একদিন আসবেই, তবে অবশ্যই আপনাকে যেকোনো একটা বিষয় বেছে নিতে হবে যেটা আপনার মন শায় দিবে, যেই কাজের প্রতি আপনার ভালোবাসা থাকবে কারণ যেই কাজের প্রতি আপনার ভালোবাসা থাকবে না সেই কাজে আপনি কখনো সফল হতে পারবেন না। বিশেষ করে যদি আপনি অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের দিকে আসতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার এমন মনভাব থাকতে হবে যে “First Learn Then Earn” তাহলেই আপনি সফল হবেন, টাকা ইনকামের ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে যে কোন একটা বিষয়ে আপনাকে স্কিল অর্জন করতে হবে এবং দক্ষ হতে হবে।। তিনি আরো বলেন লক্ষ্য স্থীর রেখে কঠোর পরিশ্রম করেই তিনি এই পর্যায়ে আসতে পেরেছেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে সরকারিভাবে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছেন সাথে ১টি ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ডের সম্মাননাও পেয়েছেন। বর্তমানে তার মাসিক ইনকাম ৪০০০০ ( চল্লিশ হাজার টাকার উপরে)। জনপ্রিয় প্লাটফর্ম ইউটিউবে তার “ETC Bangla” চ্যানেলের সাবস্ক্রাইব সংখ্যা ৪ লক্ষ্য ২০ হাজার প্লাস এবং তার চ্যানেল টি ইউটিউব কর্তৃক ব্লু ভেরিফাইড এবং ইউটিউব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অ্যাওয়ার্ড হিসেবে তিনি পেয়েছেন ১টি সিলভার প্লে বাটন।
ফ্রিল্যান্সিং জীবনের সূচনা
সময়টা ছিল ২০১৬ সাল, মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান তিনি, কলেজে পড়া অবস্থায় বাংলাদেশের কয়েকটা টেক চ্যানেলের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে ইনকাম করা যায় এবং অনেকেই ইউটিউব থেকে মাস শেষে ভালো আয় করে। সেই থেকে তিনি মনে মনে ভাবেন ইউটিউব থেকে তিনিও একদিন ইনকাম করবেন সফল হবেন। কিন্তু এই বিষয়ে তার কোন জ্ঞান ছিল না বা ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করার জন্য ছিলো না তার কোন এক্সেসোরিস। কিন্তু তার ছিল অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর একজন বড় ইউটিউবার এবং ফ্রিল্যান্সার হওয়ার স্বপ্ন, তাই হাতে থাকা J2 Samsung মোবাইল আর ৪০ টাকার ইয়ারফোন দিয়েই শুরু করেন তার ইউটিউব যাত্রা।। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো এই বিষয়ে তার ছিল না কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান শুধুমাত্র ইউটিউবের সাহায্য নিয়েই তিনি সবকিছু শিখেছিলেন আর এখন বর্তমানে তিনি একজন সফল ইউটিউবার এবং ফ্রিল্যান্সার। তিনি বিশ্বাস করেন কোন প্রাতিষ্ঠানিক কোর্স না করেই শুধুমাত্র ইউটিউব এর ভিডিওর সাহায্য নিয়েই আপনি হতে পারেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। তবে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান বা কোর্স করলে আপনার পথ আরও সহজ হবে এবং মজার বিষয় হলো তার অনুপ্রেরণায় আশেপাশের অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন এবং তার ভিতরে কয়েকজন সফলও হয়েছেন। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যার নাম সারা বাংলাদেশে।
ইমরানের ব্যক্তিগত জীবন
ইউটিউবার ইমরান হোসেনের জন্মস্থান ময়মনসিংহে। বয়স আনুমানিক ২৬ বছর, মা-বাবা পরিবারের সঙ্গে বেড়ে ওঠা ময়মনসিংহের গাজীপুরের জিরানিতে লেখাপড়াও সেখানেই এবং পরিবারে রয়েছে মা বাবা বোন ও তার স্ত্রী সন্তান। বর্তমানে তার বাবা গ্রামের একজন ছোট ব্যবসায়ী মা গৃহিণী। তার একমাত্র ছেলে সন্তানের বর্তমান বয়স ৬ মাস, ফ্রিল্যান্সিং এর পাশাপাশি ব্যবসা করতেও তিনি পছন্দ করেন তবে তিনি বর্তমানে একজন ফুল টাইম ফ্রিল্যান্সার। তার সাথে কথা বলে জানতে পারা যায় তিনি একজন কঠোর পরিশ্রমি মানুষ তার কাজের জন্য তিনি অনেক পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তি দিয়ে এই পর্যন্ত এসেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন মানুষ চেষ্টা করলেই অনেক কিছু করতে পারে। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে ময়মনসিংহের নিজ গ্রামের বাড়িতেই থাকেন।
আপনি কেন ফ্রিল্যান্সিং করবেন
তার কথামতে ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে এমন একটা পেশা যেটা দ্বারা আপনার নিজ কর্ম সংস্থান তৈরি করতে পারবেন এবং যেকোনো যায়গায় বসে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে মাস শেষে একটা ভালো ইনকাম করতে পারবেন। যেটা অন্য কোন পেশায় হয়তো সম্ভব না। বাংলাদেশে হাজার হাজার তরুন ছেলে মেয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে মাস শেষে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করছে। ফ্রিল্যান্সিং এমন একটা পেশা যেখানে যেকোনো শ্রেণীর মানুষ কাজ করতে পারে। আপনি যদি একজন প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার হতে পারেন তাহলে আপনার জীবন পাল্টে যাবে। হাজারো শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে বেকার বসে থাকে চাকরি না পেয়ে বা ঘুষের জন্য চাকরি হয় না, মামা খালু না থাকার কারণে চাকরি হয় না কিন্তু আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করেন তাহলে এখানে আপনি আপনার নিজের কর্ম সংস্থান নিজে তৈরি করতে পারবেন এবং অনেক ভালো চাকরি জীবিদের থেকেও স্মার্ট ইনকাম করতে পারবেন। একবার আপনি সফল হলে আর পিছু ফিরে তাকাতে হবে ইনশাআল্লাহ।
নতুনদের জন্য পরামর্শ
তিনি বলেন নতুন যারা এই সেক্টরে আসতে চাচ্ছে বা যারা নতুন শুরু করেছেন, তাদের সকলকে বলতে চান কোন কাজেই আপনি সহজ ভাবে সফলতা অর্জন করতে পারবেন না, লক্ষ্য ঠিক রেখে কাজ করে যেতে হবে। কবে টাকা ইনকাম হবে সেটা ভাবা যাবে না আপনি যখন কাজে প্রফেশনাল হয়ে যাবেন তখন টাকা আপনার কাছে এমনিতেই ধরা দিবে ইনশাআল্লাহ। আর যে কোন কাজ করতে গেলে আপনার উপর নানা প্রতিবন্ধকতা আসবে, মানুষ উপহাস করবে নিন্দা করবে আপনার কাজের মনোভাবের উপর বাধা সৃষ্টি করবে, নানা বাধা বিপত্তি আসবে, সকল কিছুকে পিছে রেখে আপনি আপনার কাজ করে যাবেন দেখবেন একদিন যখন আপনি সফল হবেন মানুষ আপনার গুনগান গাইবে, একেক সময় আপনি ডিমটিভেট হয়ে যাবেন, কাজ করার মনমানসিকতা হারিয়ে ফেলবেন, এগুলোকে পিছনে ফেলে আপনার কাজে ফোকাস দেন সফলতা একদিন আসবেই ইনশাআল্লাহ। এটা এমন একটা সেক্টর একবার আপনি সফল হয়ে গেলে আর পিছু ফিরে তাকাতে হবে না আল্লাহর রহমতে। মনে রাখবেন টাকা গাছে ধরে না, টাকা কে আপনার ধরতে হবে আর যদি টাকা ধরতে চান তাহলে আপনি আপনার কাজে ফোকাস করেন স্কিল অর্জন করেন টাকা আপনা আপনি আপনার কাছে আসবে।
ইমরানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ইউটিউবার ইমরান যেহেতু প্রফেশনাল ভাবেই অনলাইনে আছে এবং ফুল টাইম ফ্রিল্যান্সিং করে তার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো এখান থেকে অর্থ উপার্জন করার পাশাপাশি মানুষের কল্যানে ভালো ভালো কাজ করতে। তিনি এমন কিছু করতে চান যেটার মাধ্যমে দেশের তরুন সমাজ ও যুব সমাজ যেন ফ্রিল্যান্সিং এ ভালো কিছু করতে পারে এবং এই প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে ঘুষ দিয়ে চাকরির পিছনে না ছুটে যেন মানুষ ফ্রিল্যান্সিং পেশার দিকে ছুটে। তিনি আরো জানান, মানুষের জানার ও শিখার কোন শেষ নাই তাই তিনি আরো অনেক বেশি জ্ঞান অর্জন করতে চায় এই বিষয়ে এবং সেগুলা মানুষের মাঝে বিস্তার করাই তার স্বপ্ন। তিনি তার ভিডিওর মাধ্যমে দেশের সর্বস্তরে এটা পৌছে দিতে চায় বেকার না থেকে ফ্রিল্যান্সিং শিখে নিজ কর্ম সংস্থান গড়ে তুলে নিজে অর্থ উপার্জন করুন দেশ ও সমাজ কে বেকারত্ব থেকে মুক্তি দিন। দেশের তরুন ও যুবসমাজ যেন ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে সহজভাবে আসতে পারে কাজ শুরু করতে পারে এটাই তার স্বপ্ন আর তাই তিনি এমন কিছু করতে চায় যাতে মানুষ যেন খুব সহজ ভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারে। আর সবার কাছে তিনি দোয়াও চেয়েছেন।