
বিশ্ব পরিবেশ দিবস (সংক্ষেপে WED) প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ আর জনসচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে পালিত হয় এই দিবস। এই দিনটিতেই জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ সম্মেলন (United Nations Conference on the Human Environment) শুরু হয়েছিল। এই সম্মেলন হয়েছিল ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ থেকে ১৬ জুন অবধি। এই সম্মেলনে ওই বছরই চালু করেছিল জাতিসংঘের সাধারণ সভা। তখন থেকেই প্রতি বছর এই দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি প্রথম পালিত হয় ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে। প্রতি বছরই দিবসটি আলাদা আলাদা শহরে, আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হয়। এবারে বাংলাদেশে ২০২৪ সালে “করবো ভূমি পুনরুদ্ধার,রুখবো মরুময়তা;
অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা” এই প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি পালিত হবে।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিকমতো বজায় রেখে মানুষ যাতে এই পৃথিবীর বুকে অন্যান্য সমস্ত জীবের সাথে একাত্ম হয়ে এক সুন্দর পরিবেশে বেঁচে থাকে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করাই বিশ্ব পরিবেশ দিবসের উদ্দেশ্য।বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে (জলবায়ুর প্রভাব), এর কারণে বিশ্ব পরিস্থিতি আজ ভয়াবহ অবস্থা।
শিশুদের অনাগত ভবিষ্যতের উপর জলবায়ুর প্রভাব মারাত্মক ভাবে পড়বে বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বব্যাপী এই জলবায়ু বিষয়ক বিভিন্ন সভা সেমিনার হলেও এর কোন ফলপ্রসূ হচ্ছে না।
প্রাপ্তবয়স্কের পাশাপাশি শিশুদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। মানুষের ওপর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবের প্রতি শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় দুর্বল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমান করে যে সারাবিশ্বে বিদ্যমান রোগের বোঝার ৮৮% পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে সম্পর্কিত। দি ল্যানসেটে স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর পর্যালোচনায় শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা সবচেয়ে খারাপভাবে প্রভাবিত হিসেবে বলা হয়েছে।
শিশুরা সবদিক দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি সংবেদনশীল ।জলবায়ু পরিবর্তন শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্য এবং কল্যাণকে প্রভাবিত করে। জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে শিশুদের প্রভাবিত করে তা দেশের ভেতরে এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য নির্ধারণ করে। জলবায়ু পরিবর্তনে বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়ায় শিশুদের কোনো বক্তব্য বা মনোযোগ নেই। এবং স্বল্প আয়ের দেশে- বসবাসকারীরা উচ্চমাত্রায় রোগের বোঝায় ভোগে এবং তারা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবেলা করতে কম সক্ষম।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হলে বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস অত্যান্ত জরুরী এবং বাধ্যতামূলক। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে মানুষকে সজাগ ও সচেতন করতে হবে। কলকারখানায় কালো ধোঁয়া নির্গমন কমিয়ে আনতে হবে। সিএফসি নির্গত হয়- এমন যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমাতে হবে, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে এবং গাছের পরিচর্যা নিতে হবে। প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে, পরিবেশ সম্মত নিয়ম নীতিমালা অনুসরণ করে কারখানা স্থাপন করতে হবে, পরিবেশ বিষয়ক কর্মকাণ্ড সরকারের ভূমিকা বেশি থাকতে হবে, পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থা গুলোকে কাজ করার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা প্রদান করতে হবে, পরিবেশের উপর বাজেট বৃদ্ধি করে সেই মোতাবেক কাজ করতে হবে এবং পরিবেশ বিষয়ক কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি এই জলবায়ুর প্রভাব কমাতে বিশ্বের সকল দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে অচিরেই এই বিশ্বব্যাপী সমস্যার সমাধানে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।