খুলনায় চিকিৎসক দম্পতির দৃষ্টিনন্দন ছাদবাগান

সহ সম্পাদক

স্টাফ রিপোর্টার।।

শখের বশে নিজেদের বাড়ির ছাদে বাগান গড়ে তুলেছেন খুলনার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আমিরুল খসরু ও তার স্ত্রী গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. আফরোজা খানম। নগরীর আহসান আহমেদ রোডের দৃষ্টিনন্দন এই ছাদবাগানে রয়েছে আড়াইশ’ প্রজাতির ১ হাজার ৮০০টির বেশি গাছ। ৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের এই ছাদবাগানে আছে দুর্লভ অনেক গাছও।

প্রায় ২ যুগ আগে শুরু করা এই ছাদবাগান ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য গাছ রয়েছে। এরমধ্যে বনসাই একটি আম বট গাছের বয়স প্রায় শত বছর। পাতাগুলো দেখতে আম গাছের পাতার মতো হওয়ায় এর নাম আম বট গাছ। এছাড়াও বাগানে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ও দুর্লভ প্রজাতির আফ্রিকান খেজুরের একটি গাছ, যার বয়স প্রায় ২০ বছর। এটির শেকড়ের বেশিরভাগ অংশই মাটির ওপরে দৃশ্যমান। সবমিলিয়ে ছাদবাগানে থাকা ২৫০ প্রজাতির ১৮শ’রও বেশি গাছের মধ্যে ৮০ ভাগই বনসাই।

ডা. আমিরুল খসরু বলেন, ২০০০ সালে আমি ছাদে বাগান শুরু করি। তখন একটি ভাড়া বাসায় থাকতাম। এই বাসায় এসেছি ২০০৬ সালে। ৫ হাজার বর্গফুট ছাদের পুরোটাতেই গাছ রয়েছে। বনসাইয়ের প্রতি আমার ঝোঁক বেশি। এখানে বট, অশ্বত্থ, পাকুড়, আম বট, ফাইকাচ ভ্যারাইটি, শিমুল, হিজল, তমাল, গাব, পেয়ারা, এলাচ লেবু, কদবেল, রঙ্গন, বাগান বিলাস, আম, নারকেল, কুল, রুবি লঙ্গান, খই ফল, দেশি তেঁতুল, উইপিং তেঁতুল, কাঞ্চন, এডেনিয়ামসহ বিভিন্ন প্রজাতির বনসাই গাছ রয়েছে।

তবে ডা. আমিরুল খসরু ও ডা. আফরোজা খানমের ছাদবাগানে বনসাই ছাড়াও স্বাভাবিক আকৃতির অনেক গাছও আছে। খুলনার এই চিকিৎসক দম্পতি নিয়মিত এই ছাদবাগানের পরিচর্যা করেন। এছাড়া গাছে পানি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার ও মাটি বদলের জন্য ২ জন কর্মচারীও রয়েছে।

ডা. খসরু বলেন, বাগানের বেশিরভাগ কাজই আমি নিজে করি। গাছ লাগানো, কোথায় রাখতে হবে, গাছ কীভাবে বনসাইয়ে রূপান্তরিত করতে হবে সেগুলো আমি করি। এমনকি সৌন্দর্য বর্ধন, সার ও কীটনাশক দেয়ার কাজও নিজে করি। খুলনা নগরী ও ফুলতলার বিভিন্ন নার্সারি থেকে গাছের চারা ও কলম সংগ্রহ করেছি। এমনকি যশোরের বিভিন্ন জায়গা থেকেও কিনে এনেছি, কারণ যশোরে ভারত থেকে অনেক গাছ আসে। এছাড়া ঢাকার সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন নার্সারিতে গিয়েও গাছ এনেছি।

তিনি জানান, জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলায় আলাদা বাগানবাড়ি করেছেন। ছাদবাগানের যেসব বড় গাছ ছিল তার বেশিরভাগই তিনি সেখানে নিয়েছেন। ভালো ফলন পেতে টবের বদলে সেখানে মাটিতে গাছ লাগিয়েছেন। তবে শহরের এই ছাদবাগানে এখনও পেয়ারা, আম, ডালিম, লেবু, মাল্টা প্রভৃতির কিছু বড় গাছ রয়েছে। যেগুলোয় নিয়মিত ফল হয়।

ছাদবাগান করার কারণ জানতে চাইলে ডা. আমিরুল খসরু বলেন, একেকজন মানুষের মধ্যে একেক ধরনের বিষয়ে আগ্রহ ও দুর্বলতা থাকে। আমাদের বান্ধবী ডা. নাহিদ বনসাই গাছ তৈরি করতো, তাকে দেখে আগ্রহী হয়েছি। এছাড়া ডা. মামুন ভাই তার চেম্বারে গাছ রাখতেন, ছাদে বাগান করতেন, তাদের দেখেই আমরা উদ্বুদ্ধ হই।

তিনি বলেন, ঢাকায় বনসাই মেলা হলেই সেখানে যাই। আর দেশের বাইরে গেলে বনসাই মেলা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাই। সেখান থেকে গাছ ও গাছের পরিচর্যার যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করি। আমরা দুইজনই চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। এখন অনেক সময় আছে, অবসরে এখন ছাদবাগানে বেশি সময় দিতে পারি।

প্রকৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে ছাদবাগান করেন জানিয়ে তিনি বলেন, এখান থেকে অক্সিজেন আসে। অন্যদিকে গাছ কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নেয়, কিছু ফলও পাওয়া যায়। নিজের গাছের একটা ফল খাওয়া, বাজারের ১০ কেজি ফলের চেয়েও বেশি মনে হয়। আবার ছাদে আসলেও মন ভালো হয়ে যায়। বাসায় কেউ আসলে ছাদবাগান দেখে তাদেরও মন ভালো হয়ে যায়। একধরনের মানসিক প্রশান্তি মেলে।

ছাদবাগান নিয়ে কথা হলে ডা. আফরোজা খানম বলেন, ভালোলাগা থেকেই ছাদবাগান করেছি। যখন নিজেদের বাড়ি ছিল না তখনই এটি শুরু করেছিলাম। কিন্তু তখন বাড়ির মালিক বিরক্ত হতেন, আপত্তি জানাতেন। এখন আর সেই সমস্যা নেই। অবসরে ছাদে আসি। সবসময় বাইরে যেতে পারি না, কিন্তু ছাদে আসলে বিনোদন হয়। অন্যদিকে ছাদবাগানে পাখি, প্রজাপতি ও মৌমাছি আসে। যদিও শহরের মধ্যে থাকি তারপরও প্রকৃতির অনেক কাছে থাকতে পারি। এতে মনটাও প্রফুল্ল থাকে।

Share This Article